তেল ও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘সফল’ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী; সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় চান সবার সহযোগিতা

প্রকাশিতঃ 8:53 pm | March 15, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মাস দুয়েক হয়েছে। শুরুতেই চ্যালেঞ্জ ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। প্রথম দফাতেই তেলের দাম বেঁধে দিয়েছেন। নির্ধারিত দামেই এখন বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। উত্তাপ কমেছে চালের বাজারেও। সেখানেও ফিরেছে স্থিতিশীলতা। বাজার নিয়ন্ত্রণে এ দু’ বিষয়েই সফলতা দেখিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি। নিজের বক্তব্যেও এ বিষয়টিতে তিনি ফোকাস করেছেন।

‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দু’বিষয়ে সফলতার উদাহরণ টেনেছেন প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ‘একেবারেই অসম্ভব’ বলেও মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে বলেছেন, ‘বাজার পরিচালনা যারা করেন, তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা একেবারেই অসম্ভব। যারা ব্যবসায়ী আছেন, পাইকারি ব্যবসায়ী, খুচরা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বাজারের প্রতিনিধি যারা আছেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যারা আছেন, সকলকে নিয়ে আমরা একটা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চাই। আমরা সবাই যদি যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে ভোক্তা অধিকার যেমন সংরক্ষণ হবে, ঠিক একইভাবে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ সুনিশ্চিত হবে।’

উদাহরণ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েছি খুবই অল্প সময় হল, এর মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় যে দ্রব্যগুলো আছে, সেগুলোর বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে। আমরা কিন্তু তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি ১৬৩ টাকা বোতল। আমরা মনিটরিং করে দেখেছি সব জায়গায় যে তেলের দাম ১৬৩ টাকা বা তার নিচে বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯ টাকা করে। শুরুতেই চালের অস্থিরতা ছিল, আজকে কিন্তু চাল নিয়ে কোনো সংবাদ নাই, তার মানে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। এবং সেই সাথে যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ডাল, ছোলা, চিনি বাজারে আছে।’

পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষিপণ্যগুলো নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে যে আলোচনা হচ্ছে, সেজন্য আমরা পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছি। কারওয়ান বাজারে রাতভর অভিযান চলেছে। পরবর্তীতে আমরা কাঁচাবাজারগুলোতে খবর নিয়েছি এবং আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসকদের আমরা অনুরোধ করেছি, জেলাগুলোতে যে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো যেন সহজে পরিবহনের মাধ্যমে পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে পারে।’

সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আমাদের কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সেটি কিন্তু কাজ করছে। আপনারা চাইলে ১৬১২১ এ ফোন করে আপনারা যেকোন কমপ্লেইন করতে পারেন। এবং প্রতিটি কমপ্লেইন যেন সমাধান হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিই।’

পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে আমদানি করা ৫০ হাজার টন পিঁয়াজ আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসবে এবং তখন সাধারণ ভোক্তা এর সুফল পাবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সরকার টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা,চিনি ও খেজুর সরবরাহ করছে এবং তা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা কমানোর মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’

এসসিএমএস নামের অ্যাপের পাইলটিং পর্যায়ের উদ্বোধন
ভোক্তা স্বার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যন্ত মজুদ পরিস্থিতি জানতে ‘সাপ্লাই চেইন মনিটরিং সিস্টেম’ (এসসিএমএস) নামের একটি অ্যাপের পাইলটিং পর্যায়ের উদ্বোধন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পণ্যের অবৈধ মজুদ পরিস্থিতি তদারকি বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। তিনি ব্যবসায়ীদের আইন মেনে যৌক্তিক মূল্যে ব্যবসা পরিচালনা করার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ ভোক্তাবান্ধবের পাশাপাশি ব্যবসায়ীবান্ধবও বটে। পরিশেষে তিনি সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

কালের আলো/আরআই/এমকে