ভোল পাল্টে ফুটবলের ওপর কী ফিফার নিষেধাজ্ঞা চান কাজী সালাউদ্দিন?
প্রকাশিতঃ 2:25 pm | June 27, 2023

রাইসুল ইসলাম, কালের আলো:
ফিফা সনদের পরিস্কার লঙ্ঘন করায় জিম্বাবুয়ে, কাতার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, গুয়েতমালাসহ বিভিন্ন দেশকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা। বিভিন্ন সময় ফিফা স্পষ্টভাবে বলেছে, ‘ফিফা যেসব মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ফুটবল ফেডারেশনগুলো চালায়, তার একটি-ফুটবল ফেডারেশনের ওপর কোনও ধরনের আইনী বা সরকারি হস্তক্ষেপ থাকা যাবে না।’
এবার একই রকমের নিষেধাজ্ঞার খপ্পরে পড়ার অজানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে ৪ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর এই অভিযোগ অনুসন্ধানের আদেশ স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবেদনের ওকালতনামায় যৌথভাবে স্বাক্ষর করেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি।
গত রোববার (২৫ জুন) আবেদনের শুনানির পর অভিযোগ অনুসন্ধানে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত। কিন্তু ঘটনার দিন হঠাৎ করেই ভোল পাল্টান কাজী সালাউদ্দিন। ওইদিন তিনি তার বিষয়ে অনুসন্ধানের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন চেম্বার জজ আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এ ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে বাফুফের ভেতরে-বাইরে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও শুরু হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। বাফুফে সভাপতির খোলস বদলানোর এই ঘটনায় অন্ত নেই কানাঘুষারও। কেউ কেউ বলছেন, তবে কী বাফুফে সভাপতি চান বাংলাদেশের ফুটবলের ওপরও একইভাবে নিষেধাজ্ঞা আসুক?
জানা যায়, বাফুফে নিয়ে নানান কান্ডকীর্তি ঘটে চলেছে। গত ১৪ এপ্রিল ঘাস কাটা মেশিন, বল, বিমানের টিকিটসহ চারটি আইটেম কেনাকাটায় ফিফার নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করায় (কমপ্লায়েন্স অবজার্ভ না করা) সব ধরনের ফুটবল কার্যক্রম থেকে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা। একই সঙ্গে তাকে জরিমানা করা হয় প্রায় ১০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। বাফুফের পক্ষ থেকে ১৭ এপ্রিল গঠন করা হয় ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি গত ২ মে নির্বাহী কমিটির সভা থেকে আরও ৩০ দিন সময় চেয়ে নেয়।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় জল অনেক দূর গড়াতে থাকে। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদীসহ আরও কয়েকজনের বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এরপর বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত, এমনটি জানান আব্দুস সালাম মূর্শেদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সূত্র জানায়, ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি কোচদের বেতন ভাতাসহ আনুসাঙ্গিক খরচাদি, ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ভ্রমণ খরচও বহন করে থাকে। এমনকি বাফুফের নিজস্ব ভবনটিও ফিফার অর্থায়নে নির্মিত। ফিফার অর্থকে পাবলিক মানি বলা যাবে না (ফিফার আয় পৃষ্ঠপোষক সংস্থা, গেট মানি ও টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব)। ফিফার সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে আইনী বা সরকারি হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের সকল খেলা সরকারের বাজেটের অন্তর্ভূক্ত হলেও ফুটবল একমাত্র তাঁর ব্যতিক্রম।
বিভিন্ন সময়ে ‘তৃতীয় পক্ষের অযাচিত প্রভাব’ দৃশ্যমান হওয়ায় কুয়েত, জিম্বাবুয়ে, ভারতসহ অনেক দেশের ফুটবল ফেডারেশনকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয় ফিফা। ফিফার সদস্যভুক্ত বিশ্বের ২১১ টি দেশের জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য।
বাফুফের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতের স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি দেশের ফুটবলকে ফিফার নিশ্চিত নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে রক্ষা করেছে। এটি ফুটবলের জন্য মঙ্গলের বারতা। কারণ কোন দেশের ফুটবল ফেডারেশনে অনিয়মের বিষয়সমূহ ফিফার গভর্নিং বডি এথিকস কমিটিই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। ২০১৫ সালে ফিফার প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার ও মিশেল প্লাতিনিকেও এই কমিটিই বরখাস্ত করেছিল।
সূত্র জানায়, ফিফার গভর্নিং বডি চারটি আইটেম কেনাকাটায় নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করায় সব ধরনের ফুটবল কার্যক্রম থেকে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। ওই সময় নাঈমের বিরুদ্ধে ফিফার এথিকস কমিটি কোন টাকা তছরুপের অভিযোগ আনেননি। প্রায় দু’বছর ফিফার বিভিন্ন প্রতিনিধি পুরো ঘটনার তদন্ত করে। তারা এখানে কিছু কমপ্লায়েন্স’র দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে। ফিফার ৫১ পাতার রিপোর্টে বাফুফের অন্য কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাফুফের অন্য কর্মকর্তাদেরও এখানে জড়ানোর অপপ্রয়াস ও ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন কাজী সালাউদ্দিন ও সালাম মূর্শেদীরা।
কালের আলো/আরআই/এমএইচ