প্রতীক পেয়েই শোডাউনে প্রার্থীরা

প্রকাশিতঃ 9:40 am | December 11, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দের পর পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। সোমবার প্রতীক পেয়েই গণসংযোগে নেমে পড়েছেন বেশিরভাগ প্রার্থী। প্রচারণায় এগিয়ে থাকতে প্রথম দিনই অনেক প্রার্থী নিজ নিজ আসনে ব্যাপক শোডাউন করেছেন। এতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী আবহ। অলি-গলি রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে নৌকা আর ধানের শীষ শ্লোগানে।

সোমবার সকাল থেকে দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক পাওয়ার পরপরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীরা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মিছিল ও জনসংযোগে নামেন। দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক জানা থাকায় আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন নেতাকর্মীরা। ফলে তারা দ্রুত দলীয় প্রতীকের ব্যানার, ফেস্টুন, হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচার শুরু করেন। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহীরাও প্রচারে নেমেছেন। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার।

দেশের অন্যতম একটি বড় দল গতবার নির্বাচন থেকে দূরে থাকায় গতবার ভোট নিয়ে মানুষের উদ্দীপন ছিল অনুপস্থিতি। একদশক পর সকল দলে অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে একদশক পরব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে ফিরে এসেছে ভোটযুদ্ধ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ। এর পরই জানা যাবে পরবর্তী পাঁচ বছর কোন জোট যাচ্ছে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের, না বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৭৪৫ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৯৬ জন। এ হিসাবে এবার প্রতি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন গড়ে ৬ থেকে ৭ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৭২ এবং ধানের শীষ নিয়ে ২৯৮ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনশ’ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৫৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। বাকি ৪২টি মহাজোটের শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে দলটি। অপরদিকে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৪১ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের জন্য ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৪০ এবং ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেয়া হয়েছে।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে গতকাল সকালে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর শোডাউন করতে শুরু করেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা এদিন ছিলেন বেশ সরব।

রাজধানী ঢাকার কয়েকটি আসনেও প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর এদিন ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেনন এবং ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাস গণসংযোগ করেন। ঢাকা-৯ আসনে কর্মিসভা করেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। আজ কেরানীগঞ্জের দলীয় কার্যালয় থেকে গণসংযোগ শুরু করবেন ঢাকা-৩ আসনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী গয়েশ্বরচন্দ্র রায়।

ঢাকা-১৪ আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসলামুল হক। তিনি শুরু করেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া এলাকা থেকে। ঢাকা-১৭ আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক)। ঢাকা-১১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ এ কে এম রহমতউল্লাহর কর্মী-সমর্থকরা বাড্ডা এলাকায় জনসংযোগ করেন।

নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নৌকা প্রতীক নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে গণসংযোগ ও নির্বাচনী পথসভা করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আজ থেকে শুরু করবেন গণসংযোগ।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানের নৌকার পক্ষে একযোগে ৬১টি ভোটকেন্দ্র থেকে কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল বের করা হয়।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ও পৌর বিএনপি সোমবার ব্যাপক শোডাউন করে। এবার কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গণসংযোগকালে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ধানের শীষের পক্ষে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা। গতকাল দুপুর ২টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হল প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে প্রচার শুরু করেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (হাতপাখা)। প্রায় একই সময়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম কালীবাড়ি সড়কে এবং বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার কাউনিয়ায় গণসংযোগ করে প্রচার শুরু করেন।

খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের পক্ষে বিশাল মিছিল হয়েছে। এতে অংশ নেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ হাজারো মানুষ।

মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র ২২ প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমে পড়েছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেন বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী। মুন্সীগঞ্জ-২ ও ৩ আসনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব প্রার্থী নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ভোট প্রার্থনা ও সমর্থন আদায়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করেন।

প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে দুপুর ২টার পর ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর পক্ষে নৌকা প্রতীকের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হয়। ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের পক্ষে প্রচার শুরু করেন নেতাকর্মীরা।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ নুরুল ইসলাম ওমর। বিকালে তিনি শহরের শাহ ফতেহ আলী (র) মাজার জিয়ারত শেষে লাঙ্গল মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এদিন প্রচার শুরু করেন ধানের শীষসহ অন্যান্য প্রতীকের প্রার্থীরাও।

নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজার পক্ষে প্রতীক গ্রহণ করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক।

ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারী ব্যান্ডপার্টিসহ ব্যাপক শোডাউন করেন। ফেনী-১ আসনে মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতার ও ফেনী-৩ আসনে অপর মহাজোট প্রার্থী লে. জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে প্রতীক সংগ্রহ করেন।

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের প্রার্থীদের ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই নৌকার প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন এবং ধানের শীষের প্রার্থী শামছ উদ্দিন আহমদ মিছিল সহকারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরে যান। সেখানে তারা নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও খুলনা-২ আসনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর ডিসি অফিস এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন।

কিশোরগঞ্জে প্রতীক পাওয়ার পর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জে মিছিল ও শোডাউনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা।

এছাড়া, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাটসহ সারা দেশেই প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু করেছেন সংসদ সদস্য প্রার্থীরা।

কালের আলো/এএ/এমএইচএ