ক্রিমিয়ান সেতুতে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত ৩
প্রকাশিতঃ 7:22 pm | October 08, 2022

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সংযোগকারী কের্চ সেতুতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়ক সেতুতে মালবাহী একটি ফ্রেইট ট্রাকে বিস্ফোরণের পর রেল সেতুতে থাকা একটি ট্রেনের জ্বালানিভর্তি সাতটি ওয়াগনেও আগুন লাগে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। এতে সড়ক সেতুর দুটি সেকশন ধসে পড়ে বলেও জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছে। রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল-জাজিরার।
কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে সেতুর যেখানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেখানের একটি গাড়ির যাত্রী ছিল নিহতরা। একজন নারী ও একজন পুরুষের মরদেহ পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই ঘটনায় ইউক্রেনের কর্মকর্তারা উল্লাস প্রকাশ করলেও এর জন্য কোনো দায় স্বীকার করেনি। তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর ফলেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তবে, আগুন লাগার ঘটনা মিসাইল হামলার ফলে ঘটেনি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, সেতুর আশেপাশে ক্ষয়ক্ষতির লক্ষণ না থাকায় ধরে নেয়া যায় সেখানে আকাশ থেকে ছোঁড়া অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। তবে সেতুর নিচ থেকে সুপরিকল্পিত হামলা বা গাড়িবোমা হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ক্রিমিয়ান রেলওয়ে ফেডারেল স্টেট ইউনিটারি এন্টারপ্রাইজের গণমাধ্যম বিভাগ বলেছে, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরিভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ বের করা হচ্ছে’।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এরপর ২০১৮ সালে এ সেতুটি চালু করা হয়। বর্তমানে এই সেতুটি ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে ব্যবহার করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী।
এ ঘটনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘ক্রিমিয়া, এই সেতু, সবকিছুর শুরু। অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে হবে, চুরি যাওয়া সবকিছু ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দিতে হবে, রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছু অপসারণ করতে হবে।’
অস্ট্রেলীয় সামরিক বিশ্লেষক মিক রায়ান বলেন, এই সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাদের সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না, যেহেতু সেজন্য নৌপথ রয়েছে। তবে মেলিতোপোলের দখল ধরে রাখা এখন রাশিয়ার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়লো।
১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে বিবিসি। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া উপত্যকার ক্রাসনোদার এলাকার মধ্যে একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রিজ। ইউরোপের অন্যতম দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। এছাড়া বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী এবং ১ কোটি ৩০ লাখ পণ্য এই ব্রিজটি দিয়ে পারাপার হয়।
রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার মধ্যে স্থলসংযোগের একমাত্র মাধ্যম এই ক্রিমিয়ান সেতু বা কের্চ প্রণালী সেতু। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ আধিপত্যের একটি প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ইউক্রেনের দক্ষিণে রাশিয়ার সামরিক অভিযান টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠিও এটি। এ অবস্থায় ক্রিমিয়ান সেতু অকেজো হয়ে গেলে দ্বীপটিতে পণ্য বা সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরুর দিকে ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো দখল করে আজভ সাগর বরাবর একটি স্থল করিডোর তৈরি করেছিল রাশিয়া। সেসব পুনরুদ্ধার করতে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে ইউক্রেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এই সেতু উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সেতুর সুরক্ষায় রাশিয়ার অধিকৃত ক্রিমিয়ার কের্চ শহরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এক সময় ইউক্রেনের অংশ ছিল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ অঞ্চল দখলে নেয় রাশিয়া। ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে নৌঘাঁটি কৌশলগত কারণে রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম