কনটেইনারের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জানানো হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে

প্রকাশিতঃ 11:28 pm | June 05, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনারের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর নিজেদের ৯ কর্মীকে হারিয়েছে চিরতরে। আগুন নেভাতে গিয়ে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে ওদের। ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডের পর রবিবার (০৬ জুন) সকালেই সেখানে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মাইন উদ্দিন। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে তিনি ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তবে ঘটনাস্থলে ডিপো মালিক পক্ষের কাউকে না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পুরো ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দেখছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে কনটেইনারে কী ধরনের জিনিস ছিল এ বিষয়ে তাদের প্রকৃত তথ্য জানানো হয়নি। ফলশ্রুতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তীব্রতা আরও ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাণহানি বেশি ঘটেছে বলেও মনে করছে অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাসায়নিক থেকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় তিন শতাধিক দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের। এ ধরণের আগুন নেভাতে আছে আলাদা কেমিক্যালও। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগুন নেভাতে গিয়ে ভবন মালিক কিংবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কারোরই হদিস মেলে না।

এ কারণে প্রাথমিকভাবে কোন ধারণাও পাওয়া যায় না। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও জীবনবাজি রেখে ফায়ার সার্ভিসের নির্ভীক কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তাঁরা হারিয়েছেন নিজেদের ৯ কর্মীকে।

সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনারে লাগা আগুনকে প্রথমে সাধারণ আগুন ভেবেছিলেন অধিদপ্তরের কর্মীরা। তাঁরা কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত জানতে পারেননি ভেতরে কী আছে। আগুন নেভানোর সময় কর্তৃপক্ষের কাউকেও পাওয়া যায়নি। যে কারণে কর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিলেন। ওই কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই দীর্ঘ হয়েছে মৃত্যুর মিছিল।

এই বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম রোববার (০৫ জুন) দুপুরে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষিত সদস্য রয়েছে। কেমিক্যালের আগুনে প্রশিক্ষিত সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনও ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা রয়েছে। তবে আগুন লাগার সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের অবহিত করেন ভেতরে কী ধরনের বস্তু রয়েছে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে পারি। তা না হলে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কী বলেছেন ডিজি
রবিবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আগুন নেভাতে কত সময় লাগবে, বলা মুশকিল। কারণ এখনও সেখানে বিস্ফোরণ হচ্ছে।’

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, ঘটনাস্থলে ডিপো মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার এখন আগুন নেভানো। ঢাকা থেকে আমাদের একটা টিম আসছে।’

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের আরও বলেন, মালিকপক্ষের কাউকে না পাওয়াও এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে জানা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিস ডিজি। তিনি বলেন, ‘কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এর আগে কীভাবে আগুন লেগেছে বলতে পারছি না।’

কালের আলো/বিএম/এসবি