সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডার মা
প্রকাশিতঃ 5:24 pm | April 02, 2022

কালের আলো প্রতিবেদক:
বর্তমানে সরকারি চাকরি মানেই সোনার হরিণ। আর সেই চাকরি যদি হয় বিসিএস ক্যাডার, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। প্রত্যেকেই চায় স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবন-যাপন করতে, ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে। তবে সমাজে এমন কেউ আছে, যাদের জীবনে কোনো মোহই গ্রাস করতে পারে না। সন্তানদের প্রতি মায়ের ভালোবাসার কাছে এবার হার মানলো সরকারি চাকরি।
বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত সরকারি চাকরীজীবী মা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেন। এমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত ই হুর (সেতু)। পেশাগত জীবনে সাফল্যের চূড়ান্ত অবস্থানে এসেও তিনি তৃপ্ত ছিলেন না, মন চাইছিলো অন্য কিছু। অধরা পথকেই অবশেষে বেছে নিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ১০ বছরের কর্মজীবনের ইস্তফা দিয়ে ফিরে গেলেন সংসারের মায়াজালে। সন্তানদের আরো বেশি সময় দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিন কন্যাসন্তানের জননী তিনি। স্বামী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানোয়ার রাসেল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।
জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সেতু। ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস সম্পন্ন করেন। একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সে বছরই সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী রাসেল বর্তমানে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।
সেতু জানান, জামালপুর জেলার ইসলামপুরে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। ২০১৫ সালে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।
চাকরি ছাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন কন্যাসন্তান। স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। ফলে সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সবদিক চিন্তা করে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
ফুলের তোড়া আর উপহার দিয়ে সহকর্মীরাও বিদায় জানায় সেতুকে
জানা গেছে, চাকরি ছাড়তে গত জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন সেতু। সে অনুযায়ী, ৩১ মার্চ ছিল কর্মস্থলে তার শেষ দিন। এদিন সহকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
সেতু বলেন, ‘বর্তমানে আমি পুরোদমে গৃহিণী।’
এ বিষয়ে সেতুর স্বামী সানোয়ার রাসেল বলেন, ‘সব সন্তানই চায় বাবা-মা বেশি সময় ধরে তাদের কাছাকাছি থাকুক। বিশেষ করে মায়ের সান্নিধ্যে আনন্দে থাকে তারা। সারা দিন কাজ শেষে দুজন বাসায় ফিরে সন্তানদের দেখে মন খারাপ হতো। কারণ সারা দিন কেউ আদর করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী আগে থেকেই বলত, সন্তানদের জন্য সে চাকরি ছেড়ে দিতে চায়। আমিও তাকে বাধা দিইনি। কারণ সে ঘরে ও বাইরে দ্বিগুণ পরিশ্রম করছে। এখন থেকে সংসারের যাবতীয় ব্যয় বহন করার দায়িত্ব আমার। স্বামী হিসেবে আমি আমার স্ত্রীর চিন্তা ও দর্শনকে সম্মান জানাই।’
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম