মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়, আরএমপির ৬ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

প্রকাশিতঃ 6:33 pm | September 24, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজশাহীতে এক ব্যক্তিকে ধরে মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সাময়িক বরখাস্তের এ আদেশ জারি করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্সের ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন এটিএসআই মো. নাসির উদ্দিন, এএসআই মো. সেলিম শাহাজাদা, শ্রী শংকর চন্দ্র, মো. সরোয়ার আলম, মো. শাহ আলম, মো. রিপন আলী। এ ছয়জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ঘটনার বিবরণে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলার বড়ুয়া থানার শাকপুর গ্রামের মো. খোরশেদ গাজী ও তার ভাগিনা নরসিংন্দী জেলার বাবুরহাট শেখের চর এলাকার মো. শাহীন রাজশাহীর আদালতে হাজিরা শেষে কুমিল্লা যাওয়া উদ্দেশে নগরীর গৌরহাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠছিলেন।

এ সময় হঠাৎ এএসআই মো. সেলিম শাহাজাদা ও তার সঙ্গীয় ফোর্স তাদের জোরপূর্বক পুলিশবক্সে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে খোরশেদ গাজী সেখান থেকে পালিয়ে যান।

অপরদিকে ভাগিনা শাহীনকে পুলিশ বক্সে নিয়ে আসেন। তার দেহ তল্লাশি করে দুটি সিগারেট ছাড়া কিছুই পায় না পুলিশ। কিছু না পেয়েও শাহীনকে গাঁজা সেবনের দোষারোপ করে নগদ এক হাজার টাকা কেড়ে নেয় পুলিশ।

এএসআই সেলিম সহ পুলিশ বক্সে থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা সেলিমকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে।

শাহীন নিজের আর্থিক অবস্থার বিবরণ দিলে দর কমিয়ে আনে পুলিশ বক্স এর সদস্যরা। ২০ হাজার টাকার মুক্তিপণ নেমে আসে ১০ হাজার টাকায়। এক পর্যায়ে ৬,০০০ টাকা দেয়ার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হবে বলে শাহীনকে জানানো হয়। একই সাথে বলা হয় খোরশেদ গাজীকে কল করে ডেকে এনে ধরিয়ে দিলে ২০০০ টাকা বকশিস দেয়া হবে।

শাহীন নিজের পকেটে থাকা ১০০০ টাকা দিয়ে দেয় এবং পকেটে আর টাকা না থাকায় দেশের বাড়িতে ফোন দিয়ে বাকি টাকা দিতে বলেন শাহীন। এএসআই সেলিম পুলিশ বক্সের পাশে অবস্থিত মোস্তাক টেলিকমের একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলেন এই নাম্বারে টাকা পাঠাতে। শাহিনের বাড়ি থেকে সেই নম্বরে ৪৬০০ টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। পুলিশ বক্স এর সদস্যরা সেই টাকা তুলে নিয়ে আসেন। এরপর ঘটনার সামনে আসেন পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এটিএসআই নাসির। টাকা পেয়ে ছেড়ে দেয়া হয় শাহীনকে।

ঘটনার বিবরণ থেকে আরও জানা যায়, ছাড়া পেয়ে শাহীন মোবাইলে খোরশেদ গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করে একত্রিত হন। খোরশেদ গাজী ভাগিনার কাছ থেকে পুরো বিষয়টা শোনার পর ৯৯৯ এ কল করেন।

এরপর বোয়ালিয়া থানার ইনচার্জ (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন ভিকটিমদের সাথে কথা বলেন। ভিকটিমরা ভয় পেলেও তাদের আশ্বস্ত করেন ওসি। এক পর্যায়ে ভিকটিমরা ভয়ে ন্যাশনাল গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে বোয়ালিয়া থানার ওসি গাড়িটিকে ফিরিয়ে আনেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে পুরো ঘটনার শোনেন এবং হাইকমান্ডকে জানিয়ে দেন।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার খোরশেদ গাজী বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

পরে ঘটনা প্রাথমিক প্রমাণ হওয়ায় পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এটিএসআই নাসির, এএসআই সেলিম সহ পুলিশ বক্সের কনস্টেবল শঙ্কর, শাহ আলম, সারওয়ার ও রিপন আলীকে তাৎক্ষণিক ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেন পুলিশ কমিশনার।

পরে বোয়ালিয়া থানার ওসি ভিকটিমদের সম্মানের সাথে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে ঢাকার গাড়িতে তুলে দেন।

অভিযুক্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, অভিযুক্ত ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাময়িক বরখাস্তের কারণে তারা আপাতত সরকারি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা পাবেন এবং আরএমপি পুলিশ লাইন্সে আইআর এর নিকট রোলকল দেবেন।

কালের আলো/এসআরবি/এমএম