জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের কাছে সাবেক তিন কমিটির নেতাদের প্রত্যাশা

প্রকাশিতঃ 9:52 am | September 15, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯, ’৭০-এর নির্বাচন আর মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে এক মোহনায় নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের ছিল ঐতিহাসিক ভূমিকা। গৌরবময় এ ঐতিহ্য বুকে নিয়েই সোনালী আগামীর লক্ষ্যপূরণে দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনটি পথ চলছে।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের নবযাত্রা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার জয়ের

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই যেন আকস্মিক লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে দেশের সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখা এ সংগঠনটি। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীর যুগে নানা কারণেই বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে ছাত্রলীগকে। ধূসর বর্ণ নিয়েছে সংগঠনটির অহঙ্কার ও গৌরবের ইতিহাস।

অযোগ্য ও ব্যর্থ হিসেবেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কলঙ্কময় ঘটনার জন্ম দিয়ে নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে কথিত মানবতার ফেরিওয়ালাদের।

শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের।

আরও পড়ুন: পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী, দায়িত্বে নাহিয়ান-লেখক ভট্টাচার্য

এমন বাস্তবতায় জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম কালের আলো কথা বলেছে শোভন-রাব্বানীর কমিটির আগের তিন কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। কথা বলেছে পদবঞ্চিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতার কাছে নিজেদের প্রত্যাশার বিষয়টি জানিয়েছেন কালের আলোকে।

মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের নেতৃত্বাধীন ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামী লীগের ঘোর দু:সময়ে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। কারাগারের বন্দিশালায় সেই সময় কেটেছে তাঁর দিন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী এ সাধারণ সম্পাদক কালের আলোকে বলেন, ‘সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ছাত্রলীগ একটি ক্রান্তিকাল সময় অতিক্রম করছে বলে আমরা মনে করি।

এমন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

আগামী দিনের সুখী-সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নেত্রীর পাশে থেকে তা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী।’

তিনি বলেন, ‘দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে ছাত্র রাজনীতি করানোর জন্য যে রীতি প্রধানমন্ত্রী চালু করেছিলেন আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংগঠনিক ইউনিটে ছাত্রদের হাতেই ছাত্র রাজনীতি তুলে দেবে নতুন নেতৃত্ব।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত বা মাস্তানের হাতে নেতৃত্ব আশা করি না। সন্ত্রাসমুক্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বর্তমান নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত নাশকতা ও লম্ফঝম্ফ প্রতিরোধে রাজপথেই কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নতুন নেতৃত্ব সব সময় নেত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করবে।

এবং সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পালনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। প্রকৃত ছাত্রদের হাতেই ছাত্র রাজনীতি চাই। তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি দিয়ে তাঁরা সংগঠনকে গতিশীল ও বেগবান করবে। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে গুছিয়ে আনতে পারলেই তাঁরা নেতৃত্বে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।’

বিএনপি-জামায়াত জোটের তিন মাসের হরতাল-অবরোধ চলাকালে বোমাবাজদের শায়েস্তা করতে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন সোহাগ-জাকিরের নেতৃত্বাধীন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু। বাংলামোটরে খালেদা’র গাড়িবহর রুখে দিয়েও আলোচিত হয়েছিলেন এ সাবেক ছাত্রনেতা।

তিনি কালের আলোকে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্পিত দায়িত্ব আশা করি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সদ্যবিদায়ীদের ন্যায় ক্ষমতার আধার হিসেবে না নিয়ে আমানত হিসেবে নিবেন। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া দু’জনই সংগঠনের অভিজ্ঞ এবং পুরনো কর্মী।

আশা করি সংগঠন পরিচালনায় তাঁরা নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দেবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশ্বরত্ন শেখ হাসিনার দেয়া দায়িত্ব তাঁরা আদর্শিক দৃঢ়তা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবে।

সর্বোপরি, সংগঠন পরিচালনায় পিতা মুজিবের আদর্শ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন-ই বন্ধুবর জয় এবং লেখক এর একমাত্র অনুসরণীয় পথ হবে এই প্রত্যাশা আমাদের।’

শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে সক্রিয় মুখ ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া। নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি কালের আলোকে বলেন, ‘মমতাময়ী নেত্রী যে সব সময় ছাত্রলীগের খেয়াল রাখেন সেটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে।

আমরা চাই ছাত্রলীগ যেন ভবিষ্যতে আর এ ধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত না হয়। সংগঠনকে কেউ ব্যবহার করে অপরাধ করলে নেত্রী তাদের শাস্তি দেয়, ভালো কাজ করলে নেত্রী বুকে তুলে নেন। এ কথা মনে রেখেই সবার পথচলা উচিত।’

কালের আলো/ওএইচ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email