আওয়ামী লীগ ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাবে, তা হবে না: কাদের

প্রকাশিতঃ 6:28 pm | September 27, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাজধানীতে শনিবার ১৪ দলের সমাবেশ বিএনপির জনসভার পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির সভাটা কবে হবে সেটা তো এখনও ঠিকই হয়নি। বিএনপি জোর করে ২৯ তারিখে করবে? কেন এই জেদাজেদি? অনুমোদন ছাড়া সভা করবে, এত লাফালাফি কেন? ১০ বছরে ১০ মিনিটও রাস্তায় নামতে পারেনি। এখন হঠাৎ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুশি করে ব্যর্থতা ঢাকার জন্য লাফালাফি করছেন। এত লাফালাফির পরিণাম শুভ হবে না। হুমকি-ধামকি দিয়ে আন্দোলন করবেন, আর আওয়ামী লীগ ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাবে, তা হবে না।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচি সফল করতে আয়োজিত এই যৌথসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা ও সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতারা যোগ দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে। এখন আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি নেই। নেত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, আমাদের কর্মসূচি আমরা দেব। কারো কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আমরা দেব না। তারা সভা করবে আমরা পাল্টা করবো— দেশের মানুষকে আতঙ্কে রেখে এ ধরনের রাজনীতি আমাদের প্রয়োজন নেই। নির্বাচন পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে।’

১৪ দলীয় জোটের ২৯ তারিখের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৪ দল পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে, নিজেরা বসেছে। এখন তারা মহানগর নাট্যমঞ্চে আরেকটু বড় পরিসরে নেতাকর্মীদের সমাবেশ করবে। এটা বিএনপির সঙ্গে কোনো পাল্টাপাল্টি নয়।

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি দল। আমাদের ভরা কলসি, ভরা কলসি নড়ে না। যাদের শূন্য কলসি, তারাই ফাঁকা আওয়াজ করে। আমাদের উত্তেজিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। আমরা কারো উসকানির ফাঁদে পা দেব না। দেশের মানুষ খুশি— নির্বাচন হবে। পরিবেশটা শান্তিপূর্ণ থাকবে— এটাই আমরা চাই। আমরা নির্বাচনের জন্য সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত হচ্ছি। দেশের অর্ধেক অংশে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এই সময়ে কেন আমরা সংঘাত করবো?’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই, তবে সতর্কতা আছে। আমরা সতর্ক আছি। দেশের সর্বত্র আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন— এটাই দলের নির্দেশ। বিএনপি সমাবেশ করবে, আমরা পাল্টাপাল্টি কিছু করবো না। তবে সারাদেশে নগর, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের রাজনীতির অঙ্গনে অশুভ শক্তির পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপিসহ তাদের সাম্প্রদায়িক দোসররা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতার ছক আঁটছে। তারা সহিংসতার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এমন মেসেজ ও তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। তারা যেভাবে হাঁকডাক হুমকি-ধামকি শুরু করেছে, তাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।’

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সভা-সমাবেশে যদি নৈরাজ্য, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। আর সহিংসতা-নাশকতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথাযথ জবাবই দেবে। আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত আছি। বিএনপি ও তার দোসররা সহিংসতা-নাশকতার দিকে পা বাড়ালে, জনগণই তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। কিন্তু কিছুদিন আগে আইআরআইয়ের জরিপে দেখা গেছে— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৬৬ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ৬৪ শতাংশ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সম্ভ্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ। আমার প্রশ্ন, যে দলের জনপ্রিয়তা সিংহভাগ সেই দলকে বাদ দিয়ে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব?’

তিনি বলেন, এটা কোনো জাতীয় ঐক্য নয়। এটা হচ্ছে নেতায় নেতায় ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক ঐক্য। এটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের প্রতি আস্থাশীল।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী রাজধানীসহ দেশব্যাপী গণসংযোগ করবে। আমরা ভোটারদের কাছে যাবো, বাড়ি-বাড়ি যাবো, গণসংযোগ করবো। তবে রাস্তা অবরোধ করে মানুষের জন্য দুর্ভোগ হবে— এমন কোনো সভা-সমাবেশ করবো না। আর রাস্তা অবরোধ কিংবা বন্ধ করে কাউকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়াও হবে না। আমরা নিজেরাই নিয়ম মেনে চলছি। অন্য কেউ নিয়মভঙ্গ করে রাস্তায় প্রেস ক্লাবের সামনে, পল্টনের রাস্তায় সভা-সমাবেশ করবে সেটা অ্যালাউ করা হবে না। কিছুতেই জনগণের দুর্ভোগ হতে দেওয়া হবে না।’

এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভায় দল ও সহযোগী সংগঠন নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আফজাল হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, হারুনুর রশীদ, মাহমুদা বেগম কৃক, নাজমা আখতার, মোল্লা মো. আবু কাওছার প্রমুখ।

কালের আলো/এনপি

Print Friendly, PDF & Email