এএসআই হত্যা: মালিকের সংকেত পেয়ে পিষে দেয় চালক

প্রকাশিতঃ 10:16 pm | June 19, 2021

কালের আলো সংবাদদাতাঃ

চট্টগ্রাম নগরীতে চলন্ত মাইক্রোবাস দিয়ে পিষে পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শককে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মদবোঝাই মাইক্রোবাসটিকে মোটরসাইকেল নিয়ে আগে-পিছে পাহারা দিয়ে সেটির মালিক ও তার লোকজন নিয়ে যাচ্ছিল। চালকের প্রতি মালিকের নির্দেশ ছিল, মাইক্রোবাসের সামনে কোনো বাধা এলে কিংবা কোনো পুলিশ সদস্য থামার সংকেত দিলে তাকে আঘাত করেই যেন গাড়ি এগিয়ে যায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এএসআই হত্যাকাণ্ডকে মালিকের নির্দেশ অনুযায়ী এবং পরিকল্পিত বলছে পুলিশ।

শনিবার (১৯ জুন) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) মোখলেছুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন চালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেফতার তিনজন হলেন— মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল (৩৪), মো. রাশেদ (২৬) এবং তার বাবা সামশুল আলম (৬০)।

ডিসি বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকয় অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসচালক মো. বেলাল ও তার দুই সহযোগী রাশেদ প্রকাশ রাসেল এবং শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেলাল সম্প্রতি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছেন। তার আগের নাম উত্তম বিশ্বাস।

তিনি বলেন, এই চক্রের (মাদক চক্র) সঙ্গে যারাই জড়িত আছে, সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের এই ব্যবসাটা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের না, এটা চলমান। তাদের যারা মাদক দেয় এবং তারা যাদের কাছে সরবরাহ করে সবাইকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

চালক বেলাল স্বীকার করেছেন, উদ্ধার করা মাদক ও গাড়ির যে মালিক, সে তাকে নির্দেশনা দিয়েছিল যে, কোনোভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়া যাবে না। যদি ধরা পড়ার মতো পরিস্থিতি হয়, তাহলে পুলিশকে চাপা দিয়ে চলে যেতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সহকার্মী সালাহ উদ্দিনকে সে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

উপকমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, মাদকবাহী ওই মাইক্রোবাসটিকে পাহারা দেয়ার জন্য সামনে ও পেছনে দুটি মোটরসাইকেল চলছিল। সেগুলোর একটি জব্দ করা হয়েছে।

চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত হন এএসআই সালাহ উদ্দিন। এ সময় আহত হন কনস্টেবল মো. মাসুম। পুলিশ বলছে, মাইক্রোবাসটিতে মাদক পরিবহন করা হচ্ছিল।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার (১৮ জুন) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পার্বত্য এলাকা থেকে চোলাই মদবাহী একটি কালো মাইক্রোবাস চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসছে বলে জানতে পারেন এসআই সালাহ উদ্দিন।

কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার মেহেরাজখানঘাটা পেট্রলপাম্পের সামনে মাইক্রোবাসটিকে থামার সংকেত দিলে গাড়িটি গতি কমিয়ে আনে।

এ সময় গাড়িটি থেমেছে ভেবে এএসআই সালাহ উদ্দিন ও চালক মাসুম মাইক্রোবাসটির কাছে গেলে গাড়িটি গতি বাড়িয়ে দুইজনকে চাপা দেয়। আহত দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সালাহ উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি জানান, বিষয়টি জানতে পেরে ওই মোবাইল টিমের অফিসার এসআই রফিকুল ইসলাম ফোর্সসহ গাড়িটিকে তাড়া করেন।

নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় গাড়িটি থামিয়ে চালকসহ অন্যরা পালিয়ে যান৷ পরে পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে। ওই গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৭০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় চান্দগাঁও থানার এসআই আমির হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন।

মামলার বিষয়ে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসআই আমির হোসেন একটি হত্যা ও আরেকটি মাদক মামলা করেছেন। দুই মামলাতেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

কালের আলো/আরএস/এমএইচএস

Print Friendly, PDF & Email