ছুটির দিনে শপিংমল-মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়, তোয়াক্কা নেই স্বাস্থ্যবিধির

প্রকাশিতঃ 7:37 pm | May 07, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও মার্কেটসহ সব দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত ছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যদিও বেশির ভাগ ক্রেতা ও দোকানি তোয়াক্কা করছেন না স্বাস্থ্যবিধির। ঈদের আগের ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।

শুক্রবার(০৭ মে) রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, টোকিও স্কয়ার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বেশ কিছু মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

নিউমার্কেটে মাস্ক পরার প্রবণতা অনেকের মধ্যে দেখা গেছে। কিন্তু সেই মাস্ক নাকের নিচে অর্থ্যাৎ থুতনিতে ঝুলানো পর্যন্ত রয়েছে। মার্কেটে ঢোকার পর অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

বড় বড় শপিংমলগুলোতে করোনার স্বাস্থ্যবিধি তুলনামূলক পালন করা হচ্ছে। সেখানে বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেছেন। কিন্তু অনেকেই থুতনিতে মাস্ক রাখছেন। শপিংমলগুলোর দোকানে তাপমাত্রা পরিমাপের ডিজিটাল যন্ত্র রয়েছে এবং স্যানিটাইজার দৃশ্যমান। কিন্তু কোনো ক্রেতারই শরীরে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে না। আর স্যানিটাইজার ব্যবহার তো হচ্ছেই না।

মিরপুর-১০ নম্বরের শাহ আলী মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা সিনথিয়া জান্নাত বলেন, বেসরকারি চাকরির সুবাধে সপ্তাহে একদিন ছুটি পাই। এজন্য যতটুক স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব ততটুকু মেনেই আজ কেনাকাটা করতে এসেছি। সামনে ঈদ থাকায় পরিবারের সদস্যদের কথা বিবেচনা করেই নতুন কাপড়চোপড় কেনাকাটার জন্য আসতে হয়েছে।

মিরপুর-১ নম্বরের বাগদাদ শপিং সেন্টারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী রায়হান আহমেদ বলেন, ঈদের আর কয়েকদিন বাকি আছে। এজন্য মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আজ ছুটির দিন হিসেবে ক্রেতারা বেশি আসছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। গত সপ্তাহের ব্যবসার ঘাটতি আজ পুষিয়ে নেয়া যাবে।

এদিকে সকাল থেকেই রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর নাগাদ সে ভিড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নিউ মার্কেটের ভেতরে অংশে চলাচলের পুরো রাস্তায় মানুষ ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বলছে, আজ যেন চাঁদ রাত।

নিউ মার্কেটের চাইতে বেশি ভিড় ছিল নারীদের মার্কেট হিসেবে পরিচিত চাঁদনি চকে। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে জীবাণুনাশক টার্নেল বসানো হয়েছে। টার্নেটের ভেতর দিয়েই ক্রেতাদের মার্কেটের মধ্যে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবে টার্নেল দিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আর মার্কেটের ভেতরে প্রবেশের পর সামাজিক দূরত্ব যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে মার্কেটটিতে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে নিউ মার্কেট ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে। সেখানে কোনো জীবাণুনাশক টার্নেল নেই। ব্রিজটির উপরে এবং নিচে হাজার হাজার মানুষের ভিড় করোনাভাইরাস সংক্রমণের অশনি সংকেত দিচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে এখানকার ব্যবসায়ীরাও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহী।

তবে চাঁদনি চক মার্কেটের একজন দোকানি অভিযোগ করেন, ফুটওভার ব্রিজের উপর দুই পাশে হকার বসার কারণে ফুটওভার ব্রিজে চলাচলের জায়গা কমে গেছে। ফলে সরু জায়গা দিয়ে ক্রেতাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে সপরিবারে নিউ মার্কেটের ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম জানান, এত ভিড় হবে জানলে তিনি মার্কেটে আসতেন না।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে আসছি, ভেবেছিলাম ভিড় থাকবে না। এখন তো এখানে হাঁটার ব্যবস্থা নাই। বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছি।’

ভিড়ের কারণে সাইফুল ইসলাম স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মার্কেট ত্যাগ করলেও বেশির ভাগ ক্রেতাই এই ভিড় ঠেলে ঈদের কেনাকাটা করছেন। এই জনসমুদ্রে ঈদের পোশাক-পরিচ্ছদ কিনতে আসা অনেকের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে মার্কেটে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার মার্কেট কর্তৃপক্ষের থেকে এ বিষয়ে তদারকির জন্য সে রকম ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি।

কালের আলো/এসকে/এমএম