প্রথমবারের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক, সম্পর্কে নতুন মাইলফলক
প্রকাশিতঃ 8:33 pm | March 29, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
‘রক্তের রাখি বন্ধনে’ আবদ্ধ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। ইতোমধ্যেই দেশ দু’টির ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব পা রেখেছে ৫০ বছরে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের মধ্যে দিয়ে এই বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় ও গভীর হয়েছে।
বীরের জাতি বাঙালির বীরত্বের পঞ্চাশ বছরের পূর্ণতার সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে প্রথমবারের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সহনশীলতা এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে রচিত হয়েছে সম্পর্কের নতুন এক মাইলফলক।
সময়ের পরিক্রমায় ‘নবতর মাত্রায়’ উন্নীত দেশ দু’টির মাঝে তিন বছর মেয়াদী এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে তথ্য, জ্ঞান ও প্রযুক্তি আদান প্রদানের সুযোগ তৈরি হবে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। একই সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে দুর্যোগে প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতেও তাঁরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত শনিবার (২৭ মার্চ) ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী নিজ নিজ সরকারের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়িয়েছে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে তাদের দূরদর্শী নেতৃত্বের দৌলতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন বিশ্বে ‘সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের একটি দৃষ্টান্তও হয়ে উঠেছে। অব্যাহত এ সম্পর্ককে আরও গভীরতর করার পাশাপাশি বৈচিত্র্য আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দুই দেশের সরকারপ্রধান হাসিনা-মোদী।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন কালের আলোকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়িয়েছে। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সহনশীলতা এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় ও মজবুত হবে। একে অপরের প্রয়োজনে অতীতের মতোই উভয় দেশ সব সময় পাশে থাকবে।’

কী রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে?
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী নিজ নিজ সরকারের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূত্রপাত হয়েছে। কৌতূহলী মানুষের মনেও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কী রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে?
গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক এই সমঝোতা স্মারকে বিবেচ্য বিষয়সমূহ হচ্ছে- বাংলাদেশ এবং ভারতে সম্ভাব্য দুর্যোগের ঘটনার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি। দুই দেশের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশমন এবং সহনশীলতা সৃষ্টি।
স্ব স্ব অঞ্চলে বড় ধরণের প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সময়ে যে কোন পক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রাণ, সাড়া দান ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো। দুর্যোগ সনহশীলতা নিশ্চিতকরণে দুর্যোগ সাড়া দান, পুনরুদ্ধার, প্রশমন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য, রিমোট সেন্সিং ডাটা ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত এবং অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম চর্চাসমূহ বিনিময়।
দুর্যোগ প্রস্তুতি, সাড়া দান এবং প্রশমনে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে উন্নত তথ্য প্রযুক্তি, আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, রিমোট সেন্সিং, নেভিগেশন পরিসেবা এবং রিয়েল টাইম ডাটা শেয়ারিং-এ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতা প্রদান। উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক যৌথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মহড়া পরিচালনা।
দুর্যোগ সহনশীল জনগোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্য মানদন্ড, সর্বশেষ প্রযুক্তি ও টুলস বিনিময়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকাশনা এবং উপকরণাদি যেমন : পাঠ্যপুস্তক, নির্দেশিকা বিনিময় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি হ্রাস সম্পৃক্ত যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা।
এই সমঝোতা স্মারকের আওতাধীন কার্যক্রম পরিচালনায় উভয় পক্ষ একটি করে যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করবে। বাস্তবায়িত সহযোগিতার অগ্রগতি ও ফলাফল পর্যালোচনার পাশাপাশি সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ নির্ধারণ ও সনাক্তকরণ, সম্মত কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ও ত্বরান্বিতকরণ এবং সহযোগিতার বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও গ্রহণের জন্য উভয় দেশের সিনিয়র লেভেলে ওয়ার্কিং ভিজিট এবং সভার আয়োজন করবে।
উভয় পক্ষ সহযোগিতার একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এবং এ পরিকল্পনায় সহযোগিতার জন্য সম্মত প্রকল্পসমূহ সেগুলোর বাস্তবায়নের সময়সীমা ও পক্ষগুলোর বাধ্যবাধকতাসমূহ এবং নিজ নিজ দেশে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্য কর্মপরিকল্পনায় যে সকল সুনির্দিষ্ট বিষয় পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে সেগুলো অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
এই সমঝোতা স্মারকটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য বিদ্যমান সহযোগিতার সম্মতকাঠামো যেমন : যৌথ নদী কমিশন, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সম্পর্কিত সহযোগিতা প্রভাবিত করবে না। স্বাক্ষরের পরে এই সমঝোতা স্মারক তথ্য শেয়ারিংয়ে সহযোগিতার বিদ্যমান সম্মত কাঠামোতে কোনভাবেই প্রভাব ফেলবে না।
সংশ্লিষ্ট দেশের নির্ধারিত অনাপত্তি সাপেক্ষে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিদেশীরা সফর করতে পারবেন। এই সমঝোতা স্মারকের আওতাধীন কার্যক্রম বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির (আইপি) সৃষ্টি করলে পক্ষসমূহ পৃথক একটি চুক্তি সম্পাদন করবে। উক্ত চুক্তি প্রতিটি পক্ষের সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান, উভয় পক্ষের দেশ দু’টি পক্ষ-এরূপ বহুজাতিক চুক্তির বিধান অনুসারে এ জাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির মালিকানা, ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্যকরণের ব্যবস্থা করবে।
কালের আলো/এমএএএমকে