আলজাজিরার ‘অপসাংবাদিকতা’, নিন্দা-প্রতিবাদ মন্ত্রীদের

প্রকাশিতঃ 9:33 pm | February 03, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো : 

বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত টিভি চ্যানেল আল জাজিরার ভুয়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগ পুরনো। আগেও বহুবার এই অভিযোগে বিভিন্ন দেশে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবশেষ তাদের ভুয়া সংবাদের ‘টার্গেট’ হয়েছে বাংলাদেশ। “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান” নামের এই প্রামাণ্য চিত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে বিষদাগার করা হয়েছে।  

বিতর্কিত করার অপচেষ্টা হয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়েও। দুই বছরের সাধনায় নিজেদের বানানো থ্রিলার মুভিটি অপসাংবাদিকতার এক নির্লজ্জ উদাহরণ তৈরি করেছে। এ নিয়ে দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গোয়েবলসীয় কায়দায় রচিত প্রতিবেদনটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের পর নিন্দা-প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মন্ত্রীরাও।

এ বিষয়ে বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যম ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃথকভাবে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজের সরকারি সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আলজাজিরার প্রতিবেদন উদ্দেশ্যমূলক ও অপপ্রচারের নোংরা বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের সমালোচনাও করছে। দেশের এত স্বনামধন্য ও সরব (ভাইব্রেন্ট এবং অ্যাক্টিভ) মিডিয়া যেখানে কোনো ধরনের তথ্য পায়নি, সেখানে আল জাজিরা টেলিভিশনে শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসত্য তথ্যপ্রচার অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘লন্ডনে বসে যারা দেশবিরোধী অপপ্রচার করছেন এবং উসকানি দিচ্ছেন; এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সেই অশুভ চক্রের যোগসাজশ রয়েছে। জনগণ মনে করেন এ প্রতিবেদন লন্ডনভিত্তিক অংশ।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার অন্যায়-অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি স্পষ্ট করেছে।’

আলজাজিরা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে দেশবিরোধী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগী না হয়ে এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং একপেশে প্রতিবেদন বন্ধের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

অপরদিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আলজাজিরা একটা প্রতিবেদন করেছে, একটা ছবি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়ানো দুই ভদ্রলোক, দুই ভাই যারা বিতর্কিত, বলছে তারা প্রধানমন্ত্রীর বডিগার্ড। যেটি ডাহা মিথ্যা। উনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো বডিগার্ড নেই, বিরোধী দলে থাকাবস্থায়ও ছিল না, সব নেতাকর্মীরাই তার বডিগার্ড। এখন এসএসএফ আছে। কেউ পেছনে এসে ছবি তুললেই বডিগার্ড হয়ে যায় না। এটি তাদের মিথ্যা সংবাদ। আলজাজিরার মতো নামকরা গণমাধ্যম এ ধরণের সংবাদ করতে পারে, বিষয়টি অবাক করার। তাদের (আলজাজিরা) উচিত ক্ষমা চাওয়া।

বাংলাদেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আলজাজিরা বলেছে আরও কয়েকটি প্রতিবেদন দেখাবে। তাদের সম্প্রচার বন্ধ করার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নাই। কারণ আমরা বন্ধ করে খুব একটা লাভ নাই, পৃথিবী এখন উন্মুক্ত। আমরা আশা করব, আলজাজিরা আরও দায়িত্বশীল হবে। অনেকে ধারণা করছেন, অনেকে পয়সা দিয়ে আলজাজিরাকে দিয়ে এই প্রতিবেদন করিয়েছে।

আলজাজিরা তার গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় আলজাজিরা দেখা যায় না। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দেখতে হয়।

আলজাজিরার প্রতিবেদন পেইড নিউজ কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেরকমই তো মনে হচ্ছে। এ কারণে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

আলজাজিরার প্রতিবেদন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এটা তথ্যভিত্তিক নয়, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে এটা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, যেভাবে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র। প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক নয়, এটা হলুদ সাংবাদিকতা। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা পলাতক, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে, তারা এখন বিদেশি গণমাধ্যমের স্লট ভাড়া নিয়ে এসব বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। দেশের মানুষ সজাগ আছে, সতর্ক আছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সরকারের ভিত্তি তৃণমূলে প্রোথিত। সুতরাং এই ছোটখাট কাতুকুতু দিয়ে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিল, আমাদের স্বনামধন্য একজন আইনজীবীর মেয়ের ইহুদী জামাতাসহ স্বাধীনতাবিরোধী জামাত চক্র, যারা আজ দেশের মানুষের কাছে নিন্দিত, ঘৃণিত, ধিকৃত ও বর্জিত, তারা এখন তাদের অর্থ-বিত্ত দিয়ে মানুষ ভাড়া করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার স্লট ভাড়া করে, মানুষ ভাড়া করে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু প্রতিবেদন সেই অপচেষ্টারই প্রতিফলন মাত্র। কিছু ভুল ও অসত্য তথ্য কাট-পেস্ট করে যে ধরনের প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে, সেটি আসলে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।

‘অতীতে যেমন বঙ্গবন্ধুর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এখনও দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এগুলো করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরূদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে কারণ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে -এটি অনেকের পছন্দ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিকভাবে করোনা মোকাবিলায় সমর্থ হয়েছে, এটি অনেকের গাত্রদাহ, এজন্যই তারা এই ঘৃণ্য নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু এই খেলা খেলে কোনো লাভ হবে না। বিশ্বব্যাংক একসময় বড় একটি দেশের সহায়তা নিয়ে এদেশে পদ্মা সেতুর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেটি ভেস্তে গেছে। এখনও যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেগুলোও ভেস্তে যাবে।’

ইতিহাসের সূত্র ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ যখন দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই দেশবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। একে একে পাঁচজন আওয়ামী লীগের এমপিকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয় এবং জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এখনও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে যখন বিশ্ব প্রশংসায় পঞ্চমুখ, মানব উন্নয়ন-অর্থনৈতিকসহ সমস্ত সূচকে যখন আমরা বহু আগে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি, করোনাকালে ধ্বনাত্মক জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাত্র ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করে, করোনাকালে অনাহারে মৃত্যুর সকল শংকা মিথ্যে প্রমাণ করে বাংলাদেশ যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছে সেজন্য যখন সারাবিশ্ব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, এই সময়ে দেশের বিরূদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এসব তারই অংশ।’

কালের আলো/বিএস/এমএইচ

Print Friendly, PDF & Email