এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী পদটি যেখানে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় ‘উদাহরণ’
প্রকাশিতঃ 10:52 am | January 02, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
দেশের প্রতিটি প্রকৌশল সংস্থারই প্রধান প্রকৌশলী (চীফ ইঞ্জিনিয়ার) পদটিই যেন ‘সোনার হরিণ’। লবিইং-তদবিরের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনই যেখানে অঘোষিত এক নিয়মে পরিণত হয়েছে ঠিক সেখানেই উল্টো পথেই পরিচালিত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
পদোন্নতির শর্তাবলি পূরণের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই এ প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর এ নিয়ম-নীতি কার্যকরের দৌলতেই যোগ্যতার মাধ্যমেই কেউ দুই দিন, কেউ ১৮ দিন আবার কোন কোন প্রধান প্রকৌশলী দেড় মাস বা দুই মাসও দায়িত্ব পালন করেছেন।
দিনশেষে তাদের আর হতাশার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হয়নি। দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে চূড়ান্তভাবে মূল্যায়িত হয়েই সম্মান নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। এসবের মাধ্যমে নতুন এক দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি। অনুকরণীয় এক ‘উদাহরণ’ তৈরি করেছেন অন্যান্য প্রকৌশল সংস্থার জন্যও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অধিদপ্তরে রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন পথচলা শুরু হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরে মোট ১৫ জন পেশাগত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রকৌশলী প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জনকল্যাণমুখী নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে এখন এলজিইডিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো.আব্দুর রশিদ খান।
একই সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাকে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মুখরোচক খবরের শিরোনাম হতে হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিটি দপ্তরের ভেতরের জঞ্জাল পরিস্কারের কাজে হাত দেন তাজুল ইসলাম। মনোনিবেশ করেন টিম ওয়ার্কে।
ফলশ্রুতিতে নিজ মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগকেও নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে মন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মন্ত্রণালয়টির জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
অনিয়ম-দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তাদের কঠিন পথচলার ফল হিসেবেই মাত্র ৩৫২ দিনে ৫ জন প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডির দায়িত্ব পালন করে যথা নিয়মে অবসরে গেছেন। এর মাধ্যমে মন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ সচিব অনিয়ম ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের চেনা সংস্কৃতিকেও বিদায় করে ছেড়েছেন।
সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর এলজিইডির ১০ তম প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান নিজের চাকরির মেয়াদ শেষ করেই অবসরে যান। খলিলুর রহমানের দায়িত্ব পালনকালের শেষ মুহুর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
খলিলুলের মেয়াদ শেষে কে হবেন প্রধান প্রকৌশলী, তাকে কী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হবে না কী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে এমন সব প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকাই গ্রহণ করেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তাদের এ ফর্মুলায় সবাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান এবং নির্ধারিত সময়ে দায়িত্ব শেষ করে অবসরে যান। আবার এ নীতি বাস্তবায়নের ফলে একদিনের জন্যও প্রধান প্রকৌশলী পদটি শুন্য থাকেনি এবং এলজিইডির কার্যক্রমে কোন রকম অচলাবস্থাও তৈরি হয়নি।
এলজিইডি সূত্র জানায়, খলিলুর রহমান অবসরে যাওয়ার আগে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ২১৬ দিন। এরপর মো.রেজাউল করিম ২০১৯ এর ১১ ডিসেম্বর থেকে একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ পদে ছিলেন মাত্র ১৮ দিন।
এ কে আজাদ ২০১৯ এর ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন। মাত্র দু’দিন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে খুশিমনেই অবসরে যান। সুশংকর চন্দ্র আচার্য্য ২০১৯ এর ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত অর্থাৎ, ২ মাস ৩ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো.মতিয়ার রহমান ২০২০ সালের ৩ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১ মাস ২৩ দিন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুর রশিদ খান ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
দায়িত্ব গ্রহণ করেই আব্দুর রশিদ খান নিজের অধিদপ্তরটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রয়াসকেই তিনি অগ্রাধিকার প্রদান করেন। প্রতিটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের সামনের চ্যালেঞ্জগুলোকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করারও আহ্বান জানান।
সরকারের ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে এলজিইডির মাধ্যমে আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আধুনিক শহর ও গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা প্রদানে সরকার ঘোষিত সকল কর্মসূচির সফলভাবে বাস্তবায়নেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুর রশিদ খান কালের আলোকে বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের একটি নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করেছেন মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মহোদয়।’
তিনি বলেন, ‘মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও আন্তরিকতায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এলজিইডিকে গর্বিত অংশীদার করতে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কালের আলোকে বলেন, ‘আমরা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে দু’টি বিষয়কে সামনে এনেছি। কোন রকম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না এবং প্রত্যেকে নিজেদের প্রাপ্য সম্মান নিয়েই দায়িত্ব শেষ করে অবসরে যাবেন। আমি মনে করি এ নীতি বাস্তবায়নের ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। এবং প্রত্যেক প্রধান প্রকৌশলীই শতভাগ আন্তরিকতার মাধ্যমেই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন।’
কালের আলো/এসআর/এমএএএমকে