উন্নত বিশ্বের আদলে পুলিশে ‘টেকটিক্যাল বেল্ট’; বাড়বে গতি, চাঙ্গা মনোবল
প্রকাশিতঃ 6:05 pm | December 15, 2020

- নিজ বাহিনীর সদস্যদের আচরণ পরিবর্তনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আইজিপির
- প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
কাঁধে বা হাতে ভারী অস্ত্র নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা বা ছুটোছুটির দিন শেষ! এর বদলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হাত থাকবে সম্পূর্ণ খালি। একের ভেতর ছয় অর্থাৎ ছয় চেম্বারের আধুনিক একটি টেকটিক্যাল বেল্টেই এখন থাকছে সব। কোমরের বেল্টের সঙ্গে যুক্ত হোলস্টার থাকবে পুলিশ সদস্যের উরুতে বাঁধা। সেখানেই থাকবে স্মল আর্মস।
হ্যান্ড কাফ, অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, এক্সপেন্ডেবেল ব্যাটন, পানির পট, টর্চলাইট ও ওয়্যারলেসও থাকছে ওই বেল্টেই। রুটিন দায়িত্ব পালনের সময় সড়কে দাঁড়িয়ে ডিউটি করা পুলিশ সদস্যদের বড় অস্ত্র বহনের ঝক্কি থেকে মুক্ত করে স্বস্তির পরিবেশ দিতেই ইউরোপ-আমেরিকার মতোই সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘টেকটিক্যাল বেল্ট’ সংযোজন করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি)।
আরও পড়ুন: গণমাধ্যমকর্মীদের ৫ প্রশ্ন, টু দ্য পয়েন্টেই জবাব আইজিপির
শুধু কী তাই? টেকটেক্যিাল এ বেল্টের দৌলতে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা সদস্যদের কাজে গতি, মনোবল চাঙ্গা, নিজ বাহিনীকে আরও আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে তুলতেই এই ব্যবস্থা চালু করলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।
রাজধানী ও বন্দরনগরীর পুলিশের প্রায় ১০ হাজার সদস্য এ বেল্টের সুবিধার আওতায় আসছেন। বাঙালির ৫০ তম বিজয় দিবসের দিনেই বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) দেশের আধুনিক পুলিশিং’র যুগে নতুন এক অধ্যায়ের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে।
বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিনটির প্রায় ১২ ঘন্টা আগে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্বোধন করেন পুলিশ প্রধান। নতুন এ ব্যবস্থার উদ্বোধনকালে আবারও নিজ বাহিনীর সদস্যদের আচরণের পরিবর্তনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ বলেছেন ‘আগামীকাল (বুধবার) থেকেই বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই। আগামী এক মাসে এই ব্যবস্থা ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবর্তন করা সম্ভব হবে। এরপর অন্যান্য নগরী, তারপর জেলা ও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে গ্রামেগঞ্জে এই ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।’

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে মহান বিজয় দিবসের আগাম অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এরপরে শুরু হয় আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। আমাদের পূর্বসুরীরা ৯ মাসের নাতিদীর্ঘ যুদ্ধ ও আত্নত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেন।’
পুলিশ বাহিনীতে নতুন অপারেশনাল গিয়ার যুক্ত করার মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে ড.বেনজীর বলেন, ‘পশ্চিমা উন্নত দেশসমূহে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রুটিন ওয়ার্কের সময় লং ব্যারেল উইপেন ব্যবহার করে না। আমরাও আগামীকাল (বুধবার) থেকে বাংলাদেশে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে।’
তিনি বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্য বা অফিসারের যেসব ইকুইপমেন্ট বহন করতে হয় সেটি তিনি এ বেল্টের সঙ্গে বহন করতে পারবেন। ঢাকার রাস্তায় আমরা দেখতে চাই না যে আমাদের ট্রাফিক সার্জেন্ট বা ডিউটি সাব ইন্সপেক্টর এক হাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকুক, এক হাত অকুপাইড হয়ে থাকুক। এ ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টের সঙ্গে এবং বক্স সিস্টেমের মাধ্যমে তারা কমিউনিকেশন করবেন। বড় লাঠিসোটা বহন করতে হবে না। তারা এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন ব্যবহার করবেন।
অর্থাৎ বাটনের প্রয়োজনের সঙ্গে লম্বা করা যাবে এবং আর যখন দরকার হবে না তখন ছোট করে কোমরের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা যাবে। রাতে ডিউটি করার জন্য টর্চলাইট থাকবে। মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে আমাদের দেশে প্রচুর গরম পড়ে। এজন্য আমাদের রাস্তায় ডিউটি করা সদস্যরা ওয়াটল বটল ব্যবহার করতে পারবেন। একই সঙ্গে যে অস্ত্র থাকবে সেটি থাই হোলস্টার। এটি থাইতে থাকবে।
কোন পুলিশ সদস্য কোন রকম অস্বস্তি ছাড়াই ডিউটি করতে পারবেন। লং আর্মস বা ওয়্যারলেস বহন করতে হবে না। দুই হাত ফ্রি থাকবে। সেটি এর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এর ফলে পুলিশের নরমাল গেটআপে পরিবর্তন আসবে। এগুলো হচ্ছে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন’ যোগ করেন পুলিশের ৩০ তম আইজি।
হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার পরিবর্তন প্রয়োজন মন্তব্য করে ড.বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, ‘সফটওয়্যার হচ্ছে আমাদের আচরণ। আমাদের আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের ভিডিও ক্লিপস ও প্রশিক্ষণ মেটেরিয়াল তৈরি করা হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদ-সবাই আচরণগত ক্ষেত্রে হবেন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

সেই বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করে দেশবাসী, সরকার ও রাষ্ট্রের প্রত্যাশিত পরিবর্তনের সূচনা করা যাবে না। এ হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি মনোজগতের পরিবর্তন দরকার। সেটি সম্ভব হবে বলেই মনে করি। আমাদের সেই লক্ষ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুলিশের আইজি বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসের শুভক্ষণে আমরা যে পরিবর্তনের সূচনা করছি এগুলো আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর পরিবর্তন। দ্রুতই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হবো। আগামীতেও পুলিশে আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ইকুইপমেন্টস-২) মো.শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে লাইভে চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটনের পুলিশ কমিশনার সালেহ মো.তানভীর। অনুষ্ঠান মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (এডমিন এন্ড অপারেশনস) ড.মঈনুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি ফিন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট মো.রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজিপি (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) মো.মাজাহারুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি ইব্রাহিম ফাতেমীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এসএকে/এমএএএমকে