দু:সাহসিক সাইকেল অভিযাত্রায় মুজিববর্ষকে ইতিহাসের পাতায় অমলিন করলো সেনাবাহিনী

প্রকাশিতঃ 8:09 pm | December 04, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ। বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। ১ হাজার ১০ কিলোমিটার সাইকেল যাত্রা। সময় সাকুল্যে ২৪ দিন। অদম্য মনোবল, সাহসিকতা, শারীরিক সক্ষমতা আর অপরিমেয় মানসিক দৃঢ়তায় কঠিন এক সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে একীভূত দেশপ্রেমিক ১০০ সেনা সদস্য।

কিন্তু নিত্যদিন ছুটলেন ৭১ জন সেনা সদস্য। এ যেন ৭১’র মহান চেতনাকে সমুন্নত রাখার প্রতীকী ব্যঞ্জনা! তাঁরা ক্রমান্বয়ে বগুড়া, সাভার, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে সাইক্লিং করলেন। ইতিহাসের মহান নেতার চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছড়িয়ে দিলেন দেশজুড়ে।

বাঙালির হাজার বছরের চির আরাধ্য স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্খাকে ভাষা দেওয়া শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতেই তাঁর আদর্শিক অবিনাশী চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও শৌর্যকে নিজেদের মন-মননে গেঁথে দেশপ্রেম, ঐক্য ও বাংলাকে বিশ্ব দরবারেই যেন নতুনভাবে উপস্থাপন করলেন সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত ১০০ সেনা। প্রকারান্তরে মুজিববর্ষকে অমলিন করলেন ইতিহাসের পাতায়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে রোববার (০৮ নভেম্বর) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে সূচিত হয়েছিল যে দু:সাহসিক অভিযাত্রার তাঁর সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে মঙ্গলবার (০১ ডিসেম্বর)।

মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রজ্জ্বলিত শিখার আলোয় গোটা দেশকে উজ্জীবিত করা সেনাদের অননুমেয় উচ্ছ্বাস আর হৃদয় পরিপ্লুত আবেগে বরণ করেছেন স্বয়ং সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে ‘মুজিববর্ষ সাইক্লিং এক্সপেডিশন’র সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাইক্লিস্টদের মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে সনদপত্র ও পদক তুলে দেন সেনাপ্রধান।

মুজিববর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মৃতির পাতায় অম্লান করে রাখতে ‘মুজিববর্ষ সাইক্লিং এক্সপেডিশন ২০২০’ আয়োজনের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অর্পণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং একই সঙ্গে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

‘শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।’ কোন সেই ধ্বনি?-‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ ও শেখ মুজিব অবিচ্ছেদ্য; ব্যক্তি ও তার সৃষ্ট দেশ-দুটিই চিরজীবী।

এই দেশের পরাভব নেই, তার স্রষ্টা মহানায়কের মৃত্যু নেই, তিনি অমর। ফলশ্রুতিতে সেনাপ্রধানের কন্ঠে বারবার ধ্বনিত হয়-‘বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ সমার্থক। অবিসংবাদিত এ নেতার কারণেই বহু সংগ্রাম, ত্যাগ, তীতিক্ষা এবং ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

এক রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন-স্বাধীনতা। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙা বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে জানে। সাইক্লিং এক্সপেডিশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও একবার সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন সেনাপ্রধান।

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘সকল বাঁধা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বাঙালির সহজাত। জাতি হিসেবে আমরা বারংবার প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু কখনও হার মানিনি এবং প্রতিবারই মাথা উঁচু করে সক্ষমতা এবং সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুই আমাদেরকে শিখিয়েছেন কীভাবে সকল বাঁধাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এ সাইক্লিং এক্সপেডিশন ছিল কষ্টসাধ্য, চ্যালেঞ্জিং এবং দুরূহ কাজ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ জন অফিসার, ৭ জন মহিলা অফিসার, ৩ জন মহিলা সৈনিকসহ সর্বমোট ১০০ জন সদস্য এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানসিক দৃঢ়তা, শারীরিক সক্ষমতা ও কষ্ট সহিষ্ণুতার যে স্বাক্ষর রেখেছেন তার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই এটি একটি বহি:প্রকাশ। এ আয়োজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির সত্ত্বার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। আমি সকল অংশগ্রহণকারী সাইক্লিস্টদের এ দুরূহ কাজ সম্পন্ন করার জন্য আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই, ভেরি ওয়েল ডান।’

সেনাপ্রধান ধন্যবাদ জানালেন সেনা সদর জিএস শাখা, প্রশিক্ষণ পরিদপ্তর এবং রংপুর, বগুড়া, সাভার, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম এরিয়া ও ফরমেশন কমান্ডারদেরকে যাদের স্বত:স্ফূর্ত সহযোগিতায় সাইক্লিং এক্সপেডিশন আয়োজন সম্ভব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সার্বিক সমন্বয় ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য। এছাড়াও সাইক্লিস্টগণের কন্ডিশনিং ট্রেনিং এবং সাইক্লিং এক্সপেডিশনের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনা ও পরিচালনার জন্য আমি এরিয়া কমান্ডার কক্সবাজার এরিয়া ও জিওসি ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিদের বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে