নাগরিকের সঙ্গে ‘সেতুবন্ধ’ রচনায় মেয়র আতিকুলের নতুন কনসেপ্ট!
প্রকাশিতঃ 11:33 pm | December 01, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
জনতার মুখোমুখি নগরসেবক। সম্পূর্ণ নতুন এক কনসেপ্ট। হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মেয়রের কাছে নগর সেবা সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করছেন সচেতন নাগরিকরা। ভার্চুয়ালি সোজা সাপ্টা উত্তর দিচ্ছেন নগরসেবক।
নাগরিক জীবনের নানা সমস্যা উঠে এলো একেকটি প্রশ্নে। নগর পিতা ‘টু দ্যা পয়েন্টে’ কথা বললেন। যুক্ত হলেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। তারাও একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন নগরসেবকে।
সমস্যা আড়াল বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মানসিকতা নিজের ধাঁচে নেই বলেই কীনা নির্ধারিত সময় থেকেও ৪৭ মিনিট বেশি কথা বলতে হয়েছে ‘মধ্যমণি’ হয়েই। এ যেন নগর সেবক আর নাগরিকদের মাঝে অপূর্ব এক সেতুবন্ধন। আর এ সেতুবন্ধ রচনার জন্য বেছে নিলেন বিজয়ের মাসের প্রথম দিনটিকেই।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ভিন্নধর্মী এমনই এক আয়োজনের মাধ্যমে নিজের নির্বাচনী অঙ্গীকার যেমন পূরণ করলেন ঠিক তেমনি আধুনিক ঢাকা গড়ার পথে নগরবাসীকেও সম্পৃক্ত করে ফুরফুরে মেজাজেই অনন্য এক সন্ধ্যা-রাত অতিবাহিত করলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম।
সম্ভবত তিনিই প্রথম মেয়র যিনি নিজেকে কেবলই নগরসেবক ভাবেন। কর্তৃত্ববান মেয়র শব্দটিকেও রীতিমতো হিমাগারে পাঠিয়ে ছেড়েছেন। এজন্যই মেয়র আতিকুল বলতে পারেন, ‘আমি নগরপিতা নই, নগর সেবক। আমাদের সবাইকে মেয়র হতে হবে। মেয়র হিসেবে যদি আমরা কাজ করি, তাহলে এই নগরী সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে।’
কবির কবিতার ধ্রুপদী ছন্দেই চলচ্চিত্রের তারকা ফেরদৌস আহমেদ সঞ্চালনা শুরু করলেন ‘কেউ কথা রাখেনি, ৩৩ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি’। পরক্ষণেই উচ্চারণ- ‘কিন্তু কেউ কেউ আছেন যারা কথা রাখেন। যেমন আমাদের নগরসেবক কথা রেখেছেন।’
‘জনতার মুখোমুখি নগরসেবক’ অনুষ্ঠানে শুরুতেই ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ খ্যাত এ তারকা জানিয়ে দিলেন- ‘নির্বাচনের আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম কথা দিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে ৮ মাস কেটে গেল। এ সময়ে নিজে করোনার সঙ্গে লড়াই করেছেন, নিজে করোনায় বিজয়ী হয়েছেন। নিজ উদ্যোগে ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিলিয়ে দিয়েছেন।’
নগরীর সচেতন মানুষজন বলছেন, ‘মেয়র আতিকুল ইসলাম মানেই চমক। কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখেই পথচলা মানুষ। এমন নগর পিতাই ভাঙতে পারেন অচলায়তন। বুকভরা সাহসেই জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা দিতে পারেন।নিশ্চিত করতে পারেন নাগরিক সুবিধা। উপহার দিতে পারেন আধুনিক ও গতিশীল নগরী।’
সব কাজে নগরবাসীকে যুক্ত করতে চাই
আইন অনুযায়ী করপোরেশনের নগরসভাসহ প্রতিটি সভায় নাগরিকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। আপনি এটা কবে থেকে চালু করতে যাচ্ছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আইনটি দেখেছি। আমি সব কাজে নগরবাসীকে যুক্ত করতে চাই। করোনার কারণে আমাদের বোর্ডসভাগুলো করতে পারছি না। অবশ্যই আগামী বোর্ডসভাগুলোতে আমরা এই বিষয়টাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।’
মেয়র বলেন, ‘আজ তো আমি জনতার মুখোমুখি হয়েছি। আমি যেভাবে এসেছি নাগরিকরা কথা বলতে পারছেন। কাজটা শুরু করে দিয়েছি। আমরা দেখবো এতে জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হয়। আইনে যখন এটা আছে, আমরা এটা কার্যকর করবো। আমার বক্তব্য হচ্ছে, অবশ্যই জবাবদিহিতা থাকতে হবে। আমিও আজ জবাবদিহি করছি। জবাবদিহিতা যত বেশি করবো তত বেশি শহর উন্নতি হবে।’
‘বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে চাই’
প্রশ্নটি ছিল এমন- ‘ময়লাকে সম্পদে পরিণত করতে কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা’? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে উন্নত দেশের উদাহরণ টানলেন নগরসেবক। বলতে থাকেন- ‘নেদারল্যান্ডসের ময়লার গাড়িতে লেখা আছে ‘গোল্ড’। আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম, ‘গোল্ড’ লেখা কেন? তারা বলেছেন, এটা ময়লা না, ময়লা হচ্ছে ‘সোনা’। আমরাও বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে চাই। কীভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।’
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপের বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের আমিন বাজার ল্যান্ড ফিলে খুবই খারাপ অবস্থা। সেখানে আশপাশের মানুষ থেকে অনেক অভিযোগ আসছে। আমরা সেই দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মনে করি, অচিরেই দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এজন্য আমাদের ল্যান্ড ফিলে দেওয়া হচ্ছে।’
সবাই চায় ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’
মেয়র আতিক বলেন, ‘‘সবাই কিন্তু গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি চায়। আমাদের শহর আনপ্ল্যান অবস্থায় গড়ে উঠেছে। এখানে এসটিএস (ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর) কিন্তু সব ওয়ার্ডে নেই। কেন নেই? আমরা যখনই নগর পরিকল্পনা করি, তখন একটি নগরকে সুন্দর রাখান জন্য নগরের কোন স্থানে ময়লা ফেলবো, তার জন্য কোনও জায়গা রাখা হয়নি। আমাদের বিভিন্ন সংস্থার অনেক জমি খালি পড়ে আছে।
আমাদের ৭ থেকে ৮ কাঠা জমি দিলে, আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণ করতে পারি। অনেক বড় বড় বিল্ডিং হয়, কিন্তু ময়লা ফেলার স্থান নেই। আমরা ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪টি এসটিএস স্থাপনের জন্য কাজ করছি। এছাড়া নাগরিকদের অভিযোগ শোনার জন্য আমরা ২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘আমার ঢাকা’ অ্যাপ চালু করছি।’
৬৬৬ স্থানে মশার ওষুধ
মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘মশা পৃথিবীর জন্ম থেকেই আছে। ফেরাউনের আমলেও ছিল। মশামুক্ত না বলে, মশাকে কীভাবে আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, আমরা তা নিয়ে কাজ করছি। এজন্য চিরুনি অভিযান থেকে শুরু করে অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছি। এখন কিউলেক্স মশার দিন। আমার বাসাতেও মশা। এমন নয় যে মশা নেই। গত শীতকালের চেয়ে এই শীতে মশা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এটার ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। আমরা খাল ও লেক পরিস্কার করেছি। অথচ এর দায়িত্ব আমাদের না। আমরা ফোর্থ জেনারেশন ওষুধ নিয়ে এসেছি। ৬৬৬টি স্থানে ওষুধগুলো দিয়েছি। এতে মশা কোনও ধরনের ডিম পাড়তে পারবে না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর দেখেছি, ২২ বছর একই ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। শুধু দুটি কোম্পানি সিটি করপোরেশনে ওষুধ দিচ্ছে। সেই সিন্ডিকেট ভেঙেছি।’
প্রসঙ্গ বেওয়ারিশ কুকুর
নগরজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুর এর বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘বেওয়ারিশ কুকুরকে যদি ঢিল দেওয়া না হয়, তাহলে সে হিংস্র হয় না। আমাদের কাজ হচ্ছে ভ্যাকসিনেশন করা। আমাদের মহাখালী মার্কেটের নিচে ‘অভয়ারণ্য’ নামে একটি এনজিওকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে কাজ করছে। কোনও কুকুরকে মারা বা স্থানান্তর করা হবে না। আমরা কুকুরকে ভ্যাকসিন ও বন্ধ্যাকরণ করবো।’
কালের আলো/এনএল/এসএম