অন্তরাদের জন্য সব সময়ই শুভকামনা, সাবাস!

প্রকাশিতঃ 1:00 am | August 19, 2018

:: কাজী ওয়াজেদ ::

ভেবেছিলাম অন্তরা রহমানের ছবিটা পোস্ট করবো না। পরে ভাবলাম, যে মেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এত সাহসী কাজ করতে পারে তাকে সম্মানিত না করলে অন্যায় হবে। বলছিলাম ছবির মাঝের অন্তরা রহমানের কথা। একজন অন্তরা আমাদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছে। তাই ঘটনাটা সবার সাথে শেয়ার করা।

দৃশ্যপটটা ঠিক এমন। বিকাল ৬টায় ব্যস্ততম সায়েদাবাদ জনপথ রোডে মঞ্চস্থ হল সিনেমার দৃশ্য। হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় একা একা যাচ্ছে একটা মেয়ে। চলন্ত রিক্সা থেকে হাতের ব্যাগটা ধরেই এক ছিনতাইকারীর হ্যাচকা টান! মুহূর্তেই পড়ি কি মরি করে নিজেকে কোন রকমে সামলে নিল মেয়েটি। এরই মধ্যে দৌড়ে অনেক এগিয়ে গেল ছিনতাইকারী।

কিন্তু ব্যাগে থাকা খুব শখের ২টা মোবাইল ফোন আর কিছু টাকার জন্য অন্তর কেঁপে উঠলো রিক্সারোহী অন্তরার। এছাড়া এই জঘন্য কাজ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না অন্তরা। ভাবলো প্রতিবাদ না করলে আরো বেশি বেড়ে যাবে এইসব অপরাধীরা।

দৃষ্টিসীমার মধ্যেই আছে দেখে প্রচণ্ড সাহস নিয়ে ছিনতাইকারীর পিছু নিল অন্তরা। দৌড়ে কাছাকাছি যেতেই তাকে পিছনে দেখে এবার ছিনতাইকারী চলন্ত একটা বাসে উঠে পড়লো।

ইতোমধ্যে বাসের গতি বেড়ে গেল। কিন্তু নাছোড়বান্দা বীরঙ্গনা অন্তরা। সেও বাড়িয়ে দিল দৌড়ের গতি। প্রাণপণ দৌড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনরকম ঝুলে উঠে পড়লো বাসে। ধরে ফেললো ছিনতাইকারী শাহিনকে। পেয়ে গেল শখের মোবাইল আর টাকাগুলোসহ ব্যাগটা। এরপর ঘটনা বুঝতে পেরে বাসযাত্রীরা ছিনতাইকারীকে হাসপাতালে পাঠানোর মত কিছু অগ্রিম চিকিৎসা (!) দিল।

এখানেই থেমে থাকেনি অসীম সাহসী অন্তরা। এই কুলাঙ্গারগুলোকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য নিজ দায়িত্বে পুলিশ ডাকলো। পুলিশের নিকট ছিনতাইকারীকে সোপর্দ করে নিজে চলে আসলো যাত্রাবাড়ী থানায়। মামলা ঠুকে দিল ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে।

ইতোপূর্বে একাধিকবার যাত্রাবাড়ী থানায় গ্রেফতার হওয়া এই ছিনতাইকারী শাহিনের বিরুদ্ধে নেয়া হল দ্রুত বিচার আইনে মামলা। শীঘ্রই ঠিক হবে ওই ছিনতাইকারীর পরবর্তী নিবাস।

আমরা আশা করবো না সবসময় সবাই অন্তরার মত জীবনের ঝুঁকি নিক। তবে সুযোগমত সবাই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করবো এ প্রত্যাশা করতে পারি।

অন্তরার এই সাহসী কাজটা সত্যিই অতুলনীয় এবং অনুকরণীয়। বিশেষ করে সবকিছু পাওয়ার পরও একজন অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করার জন্য তাকে আইনের আওতায় নেওয়ার বিষয়ে থানায় আসা। তাই অতীব দায়িত্বশীল আর তেজী এই বীরাঙ্গনা অন্তরাকে অন্তর থেকে সম্মান না দেখিয়ে পারিনি।

আমাদের এইসব অন্তরাদের জন্য সব সময়ই শুভ কামনা। সাবাস অন্তরা! ঘটনার খবর পেয়ে থানায় আসা অন্তরার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে গ্রুপ ছবি (মাঝে অন্তরা রহমান)।

লেখক: বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পরিদর্শক
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Print Friendly, PDF & Email