জমির দলিল থেকে অস্ত্রের লাইসেন্সের কপি-সবই হাতের খেলা কর্নেল শহীদের

প্রকাশিতঃ 8:48 pm | November 10, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

নিজ এলাকার মানুষ তাকে চিনেন ভূমির দালাল হিসেবে। জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করেছেন। জমির রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া পর্চা, খতিয়ান ও নামজারির কাজেও তিনি সিদ্ধহস্ত। 

এসবের মাধ্যমে কত মানুষকে ঠকিয়েছেন; নি:স্ব করেছেন। অত:পর আলাদীনের জাদুর চেরাগের ছোঁয়ায় কোটি কোটি টাকা কামিয়ে বিদেশে চম্পটও দিয়েছেন। বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। 

সেই জাল জালিয়াতির ‘গুরু’ শহীদ উদ্দিন খান আবার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিজের এবং স্ত্রীর নামে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার কাগজপত্রেও অভিনব জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলেন খবর ছড়িয়ে পড়েছে। 

কিন্তু পাপ ছাড়ে না বাপকেও! শেষ রক্ষা হয়নি সেনাবাহিনী থেকে ‘অবাঞ্চিত’ ও পলাতক কর্নেল (অব:) শহীদ উদ্দিন খানেরও। অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের মামলায় আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে তাঁর। 

একই মামলায় যাবজ্জীবন হয়েছে তার গুণধর স্ত্রী, সৈয়দ আকিদুল ইসলাম ও খোরশেদ আলমের। এ দু’জন কারগারে রয়েছেন। জহিরুল ইসলাম মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার  (১০ নভেম্বর) ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। 

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে কর্নেল শহীদ উদ্দিনের ক্যান্টনমেন্টের ডিওএইচএস বাসা থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার পাঁচ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় নয় জনের সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর গ্রেফতারের আশংকায় আর দেশে ফিরেননি শহীদ ও তার স্ত্রী-সন্তানরা। পাশ্চাত্যের রঙিন দুনিয়ায় খাবি খাচ্ছেন। চক্করে পড়েছেন বোহেমিয়ান স্বভাবের দুই কন্যাও। তাদের জৌলুসময় উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। 

জানা যায়, আদালতের রায়ে শহীদ ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়ার পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে আবারও নিজের জালিয়াতির নতুন স্বাক্ষর রেখেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিজের ও তার স্ত্রীর নামে ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্সের কপি উপস্থাপন করেছেন। 

এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যার বেসাতির অভিযোগে নতুন করে তুলোধুনো করা হচ্ছে শহীদকে। কেউ কেউ বলছেন, ‘জাল জালিয়াতির কাগজপত্র তৈরিতে অনেক আগেই হাত পাকিয়েছেন শহীদ। অস্ত্রের লাইসেন্সের কপি জাল করাও তার মামুলি ব্যাপার।’ 

বলাবলি হচ্ছে, প্রায় দুই বছর আগে শহীদের রাজধানীর বাসা থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় শহীদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্রের লাইসেন্সের কপি কাউকে দেখাতে পারেননি। আদতে জালিয়াতিই যার নেশা-পেশা তিনিই সম্ভবত এসব জাল লাইসেন্স কপি প্রস্তুতে আদাজল খেয়েই নেমেছিলেন। অবশেষে জাল কাগজপত্র প্রস্তুত করা হলেও রায় আটকাতে পারেননি শহীদ বা তার প্রভুরা। প্রমাণ হয়েছে, আইন সবার জন্যই সমান।

কালের আলো/এসএসবি/এনএল