এএসপিটিএস’র ‘নবযাত্রা’ শুরু ত্রিশালে, আন্তর্জাতিকমানের ‘বার্তা’ সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 5:21 pm | October 13, 2020

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) থেকে:

সুবিশাল আয়তনের চেলেরঘাট। ঢাকার অদূরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে বিস্তৃত এ ভূখন্ডটি বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকা হিসেবে। সবুজ শ্যামলে ঘেরা অপার সৌন্দর্যের মায়াময় অবগাহনে রোমাঞ্চিত এলাকাটির চারপাশ।

পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাল্টে দেওয়া হয়েছে দৃশ্যপট। সম্প্রতি এখানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আর্মি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং এন্ড স্পোর্টস (এএসপিটিএস)।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ৪১ বছর বয়সী শারীরিক ও ক্রীড়া বিষয়ক একমাত্র এ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এখানে।

এর মাধ্যমে একদিকে সেনাবাহিনীর শারীরিক-ক্রীড়া বিষয়ক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ এলাকার দীর্ঘদিনের অভাব যেমন পূরণ হয়েছে তেমনি সরকারের ফোর্সেস গোল ২০৩০ অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনার পালেও নতুন করে হাওয়া লেগেছে।

বিশাল ও উন্মুক্ত জায়গায় স্বয়ংসম্পূর্ণ অবয়ব নিয়ে নবযাত্রা শুরু করা আর্মি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং এন্ড স্পোর্টসের (এএসপিটিএস) মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতের অগ্রগতির রথে চড়ে নতুন দিশারী ও কান্ডারি হিসেবে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী।

উদ্বোধনের পর পরই প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যে আর্মি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং এন্ড স্পোর্টসকে (এএসপিটিএস) একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন সেনাপ্রধান।

এএসপিটিএস দেশীয় প্রশিক্ষনার্থী ছাড়াও বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণার্থীদেরও প্রশিক্ষণ দেয় বলেও তিনি জানান।

সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী উন্নত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের এখানে বিদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী আসে। এটার স্যান্ডার্ড ওই পর্যায়ে আপনাদের নিয়ে যেতে হবে। আগে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল।

আমিও সেনাপ্রধান হিসেবে যখন ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানটিতে যেতাম তখন বলা হতো স্যার আমাদের স্পেস নেই। চাহিদামাফিক অনেক কিছুই করতে পারি না।

কিন্তু এখন সেই সমস্যা দূর হয়েছে। আমি আশা করবো এ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নীত করবেন। আমার সেই প্রত্যাশা থাকবে সংশ্লিষ্টদের কাছে।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শারীরিক প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়া উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে রাজশাহী সেনানিবাসে এএসপিটিএস  প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত করা হয়।

এএসপিটিএস প্রতি বছর শারীরিক ও ক্রীড়া বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছাড়াও অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের শারীরিক ক্রীড়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করতে সহায়তা করে।

একই সূত্র জানায়, এএসপিটিএস দেশীয় প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও বন্ধু প্রতীম শ্রীলংকা, সুদান, নেপাল ও প্যালেস্টাইনের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা সেনানিবাসে শারীরিক ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অপ্রতুলতা প্রকট আকার নিয়েছিল। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক সেনাবাহিনীর প্রতিটি জোনাল বা জেনারেল কনফারেন্সে জেনারেল কমান্ডাররা নতুন নতুন জায়গার সন্ধান দেন। এ সময়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ টি জায়গার বিভিন্ন ধরনের বিষয় উপস্থাপন করা হয়।

এরপর সেনাপ্রধান ত্রিশালের চেলেরঘাটের সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকাটিতে এএসপিটিএস গড়ে তোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই এখানে প্রতিষ্ঠানটিকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করা হয়।

আর্মি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং এন্ড স্পোর্টসকে ঘিরে বিস্তর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, ‘ভবিষ্যতে এখানে অফিসার্স কোয়ার্টার, ফ্যামিলি কোয়ার্টার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

দ্রুত সময়ের মধ্যেই এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ঢাকা টু ময়মনসিংহ যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থাও করা হবে।’

এর আগে কপ্টারে করে রাজধানী ঢাকা থেকে সকাল ১০ টার দিকে সেনাপ্রধান ত্রিশালে এসে পৌঁছেন।

এ সময় আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হকসহ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে