এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে মেজর সিনহার বোনের সুনির্দিষ্ট ১০ অভিযোগ

প্রকাশিতঃ 10:13 am | September 11, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার(১০ সেপ্টেম্বর) মামলার বাদী ও নিহতের বোন শারমীন শাহরিয়া ফেরদৌস আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে দিয়েছেন।

এদিন আদালতে এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১০টি অভিযোগ এনে নতুন করে আবেদন করেন বাদী। এতে তিনি উল্লেখ করেন, এসপি মাসুদ সিনহা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইছেন এবং মামলার আসামিদের রক্ষায় অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছেন।

গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে এ আবেদন করেন বাদী শারমীন শাহরিয়া ফেরদৌস। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম জানান, আবেদনটির শুনানি শেষে খারিজের আদেশ দেন বিচারক। তিনি বলেন, তদন্তাধীন মামলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন,

তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে কেউ প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তদন্ত কর্মকর্তার হাতে রয়েছে। এ ব্যাপারে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা ও মাহবুবুল আলম বলেন, তারা এখনো আদালতের কোনো নির্দেশনা পাননি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ফরিদুল আলমের বক্তব্যের বিষয়েও তারা কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

এসপি মাসুদের বিরুদ্ধে বাদীর নতুন অভিযোগ এনে আবেদন করার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জানান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেই চলেছেন। তিনি সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। আসামিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন তার দাপ্তরিক কার্যক্ষমতা আসামিদের পক্ষে অনৈতিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। তাই তাকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ফৌজদারি আবেদন করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।

মামলার বাদী জানান, এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনার শুরু থেকেই আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মেজর সিনহার মানহানি করেছেন। সিনহাকে হত্যা করার পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মেজর সিনহার গাড়িতে ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য পেয়েছেন। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি এটি বলতে পারেন না। এসপি মাসুদ তদন্ত কাজে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন। আদালতে যে ১০ অভিযোগ এনে নতুন করে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন বাদী সেগুলো হচ্ছে- মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার নিহত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধা, অবমাননাকর ও মানহানিকর প্রতিক্রিয়া করে চলেছেন; আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তির জন্য তিনি এখনো নানা পরামর্শ দিয়ে চলেছেন; এসপি মাসুদ একের পর এক অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অফিসে ক্ষমতার সমূহ অপব্যবহার করছেন; হত্যাকা- ঘটার পর পরিদর্শক লিয়াকতকে মামলার দায়ভার থেকে মুক্তি পেতে তিনি কৌশল শিখিয়ে দেন; আহতাবস্থায় মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে চিকিৎসা প্রদানে অনীহা ও আইনগত কোনো ভূমিকা রাখেননি; সিনহা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে মেডিক্যাল লিভ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া; কারাগারে তাকে ডিভিশন দেওয়ার জন্য চিঠি লেখা; আসামি প্রদীপের সঙ্গে আর কারা এ হত্যাকা-ে যুক্ত ছিল তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে সংশ্লিষ্টদের পাঠাতে গড়িমসি করা ও জটিলতা সৃষ্টি; সংশ্লিষ্ট অনেককে অন্যত্র বদলি করিয়ে দেওয়া; মামলার পর পুলিশের করা মিথ্যা মামলা অনুযায়ী মিডিয়াতে আসামিদের পক্ষে বক্তব্য প্রদান এবং মেজর রাশেদ খানকে মাদককারবারি হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য প্রদান করত মানের হানি ঘটিয়ে অপদস্থ করা; তল্লাশি চৌকিতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায় বলে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া; সিনহার গাড়ি তল্লাশি করে ৫০ পিস ইয়াবা বড়ি, কিছু গাঁজা, দুটি বিদেশি মদের বোতল পাওয়া যায় বলে মিথ্যা বলা ইত্যাদি। এসব আদৌ সত্য নয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন ও করছেন। এসব কারণে পুলিশ সুপারকে মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান বাদী।

সিনহা হত্যা মামলার বাদী গণমাধ্যমকে গতকাল বলেন, আদালতের কাছে আমার প্রত্যাশা, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসপি মাসুদকে উক্ত মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে র‌্যাব। তারা মামলার ১৩ আসামিকে নানা মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ পর্যন্ত মামলায় ১২ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জবানবন্দি দেননি। বর্তমানে মামলার ১৩ আসামির সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে ফেরার পথে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বোন শারমীন শাহরিয়া ফেরদৌস।

কালের আলো/এসবি/এমএইচএকে

Print Friendly, PDF & Email