বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়ন বিস্ময়ে’র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিতঃ 8:23 pm | July 22, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়ন বিস্ময়ে’র এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নয়ন করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে।

রোববার দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বর্ষ পূর্তি এবং হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভ করতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে। বিশেষ করে কৃষি ভর্তুকি, কৃষকদের অনুকূলে সার, সেচ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বাবদ ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি প্রচেষ্টার ফলেই এ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।

জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষিতে আমাদের অর্জিত সাফল্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি একে এগিয়ে নিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাবলীর সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় যুৎসই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। দুর্যোগ সহনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল উদ্ভাবন করতে হবে।

বর্তমান সরকারের গৃহীত কৃষি নীতিমালা বাস্তবায়নে দক্ষ কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানী তৈরিতে বাকৃবি আগামীতে আরো বেশি যতœবান হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের দেশে মৌসুমি ফল ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় উৎপাদনকারীরা এসব পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় কিন্তু সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা গেলে এসব দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারত। তাই সরকারের পাশাপাশি আপনাদেরও এ বিষয়ে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, হাওর এলাকার কৃষকদের এক বছরে একটি মাত্র ফসল বোরোর উপর নির্ভর করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় আগাম বন্যার কারণে এ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে হাওর এলাকার জনগণের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই বোরো ধানের উৎপাদন কমিয়ে আনা গেলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কৃষিবিদ, কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণ বিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষির সাফল্য অব্যাহত রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষক অর্থাৎ উৎপাদনকারী পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কৃষকরা উৎপাদনে আগ্রহী হবে।

হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট অবহেলিত হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ, জ্ঞান অর্থনীতির যুগ। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে হলে তার স্থানিক জাতিক, বৈশ্বিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এটি সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা, মান ও আন্তর্জাতিক চারিত্র্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, উচ্চতর কৃষি শিক্ষার পথিকৃত ও প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে শিক্ষা ও গবেষণায় বরাবরই বিশেষ যতœবান। এরই ধারাবাহিকতায় এখানকার শিক্ষা কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন বিষয় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলী আকবরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বাকৃবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান এমপি প্রমূখ।

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email