`ওয়ান ইলেভেন পরীক্ষা’ উত্তীর্ণ ডা: আজিজ যদি নৌকার কান্ডারী হন!

প্রকাশিতঃ 8:44 am | January 04, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
ওয়ান ইলেভেন নামের রাজনৈতিক সিডরের সময়ই সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা দিয়েছিলেন তিনি। কঠিন সেই দু:সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী চিকিৎসকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে অনড় ছিলেন। জোরালো করেছিলেন নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনকেও।

রেখেছিলেন গভীর প্রজ্ঞা আর নেতৃত্বের দূরদর্শীতার স্বাক্ষর। নেতৃত্বের কারিশমায় প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করেছিলেন ধীরস্থিরভাবে ঠান্ডা মাথায়। শহর থেকে গ্রাম স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎকদের এক সুঁতোয় গেঁথেছিলেন। দল, দেশ ও রাজনীতির এমন সঙ্কটসময় মুহুর্তে ঐতিহাসিক এমন ভূমিকার কারণেই স্বাচিপের রাজনীতিতে স্ব-নামে খ্যাত অধ্যাপক ডা: এম.এ.আজিজ।
সাহসী সেই ভূমিকার কারণেই রাজনৈতিক সহকর্মী, সতীর্থরা তাকে ডাকতেন ‘ওয়ান ইলেভেনের যোদ্ধা’ নামে! সাংগঠনিক যোগ্যতায় ২০০৯ ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম মহাসচিব হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ‘নেত্রী অন্ত:প্রাণ’ এ নেতাকে চিকিৎসকদের জাতীয় প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তখন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।

জাতীয় পর্যায়ে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দেয়া খ্যাতিমান এ চক্ষু বিশেষজ্ঞ অনেক দিন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন সম্পূর্ণ নতুন এক প্ল্যাটফর্মের জন্য। জাতীয় সংসদে নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত-বিশ্বস্ত এ রাজনীতিক অনেক আগেই মর্যাদাপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে ‘নৌকার কান্ডারী’ যুদ্ধে মাঠেও সরব হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার প্রশ্নে আসন ভাগাভাগিতে এ আসনটি দল এরশাদ পত্নী, প্রবীণ রাজনীতিক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ‘উপহার’ দেয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন দূয়ারে কড়া নাড়ায় এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে জোর তৎপরতা চালানো নেতাদের নাম উচ্চারণ করলে টপেই চলে আসছে ‘চরাঞ্চলের বন্ধু’ ডা:এম.এ.আজিজের নাম।
মাঠ রাজনীতি ও লবিইং দু’টিই সমান তালে গুরুত্ব দিয়ে এগুচ্ছেন তিনি। ক্রমশই তাঁর জনমতের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা অধ্যাপক ডা: এম.এ.আজিজ ১৯৮২ সালে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ৮৩ ও ৮৪ সালে প্রথমে এ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতির কন্টকাকীর্ণ নানা পথ মাড়িয়ে এখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষকও ছিলেন ডা:এম.এ.আজিজ। তবে বেশিদিন শিক্ষকতায় নিজেকে থিতু রাখতে পারেননি। শিক্ষকতা পেশা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি। তাঁর এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও রয়েছে দলের জন্য ভালবাসা। এখানেও তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন দলকেই। দলের জন্য এবং সংগঠনের জন্য নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিতেই স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন।

নিজ ইচ্ছায় অবসরের পর সৃষ্ট নতুন অধ্যায়ে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাপ্তাহিক ছুটি বাদে দিনের প্রতিটি সকালেই দায়িত্ব নিয়েই কাজ শুরু করেন। এরই ফাঁকে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হরেক রকমের আবদার-অনুরোধ মিটিয়ে চলেন। সন্ধ্যার পর পর স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে নিবিষ্ট মনেই সাংগঠনিক কাজকর্ম করেন তিনি। রাত-দিন সংগঠনের কাজেই নিজেকে নিবেদিত রেখেও নুন্যতম ক্লান্তি বা বিরক্তি নেই তার মাঝে।

এমন আন্তরিক মানসিকতার জন্যই সংগঠনের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রিলেশন স্থাপন করতে পেরেছেন। আবার সিনিয়র নেতাদেরও মন জয় করেছেন। সময় করে নিজের নির্বাচনী এলাকার এ অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানেও ছুটে যাচ্ছেন।
সমানতালে নিজ জেলা ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচিতে শুধু নিজেকে সক্রিয়ই রাখছেন না বিপুল জনসমাগত ঘটাতেও সহায়তা করছেন। সর্বশেষ বিজয় পতাকা মিছিলের পোষ্টার কিংবা ব্যানারে অতিথির তালিকায় তাঁর নাম না থাকলেও জেলা আ’লীগের নেতৃত্বের অনুরোধে সাড়া দিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কর্মসূচি সফলে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। এক্ষেত্রেও নিজের নামের পরিবর্তে দলকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ইতিবাচক এমন নজির দলীয় রাজনীতিতেও তাকে প্রশংসিত করেছে।

নিজের এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তাঁর উদ্যোগী মনোভাব তৃণমূলের সঙ্গেও সেতুবন্ধন রচনায় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে। চরাঞ্চলে দলীয় ‘ভোট ব্যাংক’ সমৃদ্ধ করার কৃতিত্বও রয়েছে দেশের এ শীর্ষ চিকিৎসক নেতার।
দল এবং সাংগঠনিক কাজে তাঁর একাগ্রতা ভোট রাজনীতিতে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দামামা বেজে উঠার আগেই জনমতে ‘নাম্বার ওয়ান’ পজিশনটি নিজের সাফল্যের ঝুলিতে ভরেছেন জনসেবা-মানবসেবায় নিজেকে নিবেদিত করা তিন শব্দের ছোট্ট এক নাম এম.এ.আজিজ।