করোনার জন্য করুণা

প্রকাশিতঃ 11:10 am | March 11, 2020

ফারজানা ইসলাম লিনু:

“কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মউত” প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মহাগ্রন্থের এই চিরন্তন বাণীকে আমরা কেউ অগ্রাহ্য করতে পারিনা। জলে স্থলে, অন্তরীক্ষে মৃত্যু আমাদের হানা দিবেই।

অবধারিত মৃত্যুর আগমন ঠেকানো দুর্ভেদ্য এক অরণ্যে রোদন জেনেও বেঁচে থাকার সম্ভাব্য সকল চেষ্টায় আমরা মরিয়া। অহর্নিশ চেষ্টা তদবিরের মধ্যেও মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইল আমাদের টুটি চেপে ধরেন যখন তখন।

বাদুড়, ইদুর জাতীয় বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ সব প্রাণী ভক্ষণের কারণে চীন দেশ থেকে ব্যাপ্তি লাভ করেছে করোনা নামক এক মরণঘাতী ভাইরাস। ভাইরাসের পাখনার জোর কম নয়।

চীনা পন্যের অবাধ বাজার ব্যবস্থা ও গ্লোবালাইজেশনের কারণে অতি দ্রুত এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের ১০১টি দেশে। চীনের নিকট প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ করোনার ঝুঁকিতে।

‘হুজুগে বাঙালী’ এই অপবাদ ধরে রাখতে আমরা সদা তৎপর। কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি বাস্তবের চেয়ে ভার্চ্যুয়ালি বেশি।

ফেসবুকে সমস্যার ভয়াবহতা ও মনগড়া সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে অত্যুৎসাহী আঁতেল ব্যক্তিরা অযথা নিজের গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন।

অথচ বাস্তবতা পুরাই ভিন্ন।

করোনা আক্রান্ত দেশ সহ বিদেশি যাত্রীদের এয়ারপোর্টে পরিক্ষা নিরীক্ষার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। কারণ করোনা শনাক্তের সাতটা মেশিনের ছয়টাই বিকল পড়ে আছে।

দায়িত্বশীল করিৎকর্মা ব্যক্তিরা বিদেশি যাত্রীদের মাথায় হাত দিয়ে জ্বর পরিক্ষা করে ছেড়ে দিচ্ছেন একে একে।

অথচ ইতালি ফেরত তিন জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।

অতি সাবধানীদের অপতৎপরতায় মাস্ক ও স্যানিটেশন সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। দশ টাকার মাস্ক দুইশো টাকা।

স্যানিটাইজারের কথা কি বলবো?

দুর্লভ স্যানিটাইজারের দুর্মূল্যের কারণে আমাদের বেঁচে থাকার আশা এখন সুদূর পরাহত।

তারপরও করোনায় মৃত্যুর পূর্বে লাভের আশাতো ছেড়ে দেয়া যায় না। লাভজনক পেঁয়াজের ব্যবসা রেখে উচ্চ মুনাফার আশায় আমরা এখন মাস্ক ও স্যানিটাইজারে পুঁজি লগ্নিতে ব্যস্ত। এই দ্রব্যগুলো মজুদ করতে পারলে কিন্তু লাভ দ্বিগুণ।

করোনা ও মৃত্যু এখন “টক অব দ্যা বিশ্ব” হলেও “লাভ- লোকসান” কিন্তু টক অব দ্যা কান্ট্রি। ফেলে দেওয়া আন্ডারওয়্যার ও নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে মাস্ক বানিয়ে ঘরের চাহিদা পূরণ করে বিক্রি করার চিন্তাভাবনা চলছে জোরেশোরে।

সবকিছু মিলিয়ে মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল দশা আমাদের।

এরমধ্যে করোনার কারসাজি নিয়ে ভয়ের বোমা ফাঁটিয়েছেন জনৈক হুজুর। ইতালিতে বসবাসকারী জনৈক বাংলাদেশির সাথে স্বপ্নে যোগাযোগ করেছে করোনা স্বয়ং।

পরাক্রমশালী ভাইরাস করোনা নিজের অবস্থান, কর্মপন্থার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দীর্ঘ এক বৈঠক করেছে সেই লোকের সাথে। তেলেসমাতি করোনার সাথে স্বপ্নদ্রষ্টার আলাপচারিতার বিস্তারিত খবর হুজুরের মাধ্যমে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে।

করোনা তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে,

একশো কোটির প্রাণ বধ করে তবেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে।

ভীতিকর বয়ানের মাধ্যমে হুজুর করোনার যাবতীয় তত্ত্ব ফাঁস করে দিচ্ছেন। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিংয়ের উন্মুক্ত বাজার জনাকীর্ণ এই দেশে চীনা পণ্যের সাথে চীনা অসুখ অবলীলায় স্থায়ী আবাস গেড়ে বসবে। অবধারিত এই শঙ্কা সচেতন মহলের।

শঙ্কা বা আতংক তো কোন সমাধান নয়।

সমাধানের খুঁজে চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠে অতি মূল্যবান কিছু পটচিত্র।

জনসমক্ষে ফুচকাওয়ালা পুচ্ছ দেশে আঙ্গুল ঢুকিয়ে চুলকায় নিত্য। সেই আঙ্গুল দিয়ে ফুচকা ভেঙে পুর ভরে ফুচকা প্রেমিদের রসনা বিলাসে রসদ জোগায় ফুচকাওয়ালা।হাতের উপর হাঁচি দিয়ে সেই হাতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ছাড়া কিছু একটা দেখার চেষ্টা করে অফিস ফেরত পথচারী।

পাবলিক প্লেসে মনের আনন্দে কান চুলকানো ও দাঁত খোঁচানোকে অতি জনপ্রিয় শিল্পকর্ম মনে করে যে দেশের মানুষ, এমন দেশের গর্বিত বাসিন্দা আমরা।

ভদ্রবেশী “কোভিড ১৯” কেমনে টিকবে আমার বুঝে আসছে না।

বিশ্ব জয় করে পরাক্রমশালী করোনা ভাইরাস আমাদের নোংরামির কাছে পরাজয় স্বীকার করে পালাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

কালের আলো/বিআর/এমএম