গাইবান্ধা-৩ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

প্রকাশিতঃ 10:35 pm | January 25, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

টানা ছয়বার সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ড. টিআইএম ফজলে রাব্বীকে হটিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ের মুখ দেখে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা: ইউনুস আলী সরকার। তার মৃত্যুর পর আসনটিতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ফলে সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে কে নৌকার কান্ডারি হতে যাচ্ছেন এ নিয়েও চলছে চূলচেরা বিশ্লেষণ। এ আসনে দলটির প্রায় দেড় ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মফিজুল হক সরকার জনপ্রত্যাশায় এগিয়ে রয়েছেন। যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটিতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত এমন মত দিয়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ইতোমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত মেজর মফিজুল হক সরকারের অব্যাহত জনসংযোগে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবের ওপর।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে এমন চিত্র।

জানা যায়, গাইবান্ধা-৩ আসনটি পলাশবাড়ী উপজেলার ৯টি ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার প্রায় ৪ লাখ। এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও এই আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যাপক জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয নেতাদের দূয়ারেও তারা লবিইং তদবিরে পার করছেন ব্যস্ত সময়।

সূত্র জানায়, শুন্য হওয়া এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজকে প্রাধান্য দিচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে একাধিক নেতার নাম জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।

এদিক থেকে আলোচিত হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) মফিজুল হক সরকার, স্থানীয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুল হক, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, প্রয়াত সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকারের জ্যেষ্ঠ সন্তান ড. ফয়সাল ইউনুস ও স্থানীয় পলাশবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর প্রধানের নাম।

স্থানীয় পলাশবাড়ী সদরের পশ্চিমপাড়ায় স্থানীয় চায়ের দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আলাপ হয় বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘সৎ, গ্রহণযোগ্য এবং এলাকার উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ একজনকে এবার সংসদ সদস্য হিসেবে চান। যাকে বিপদে-আপদে পাশে পাওয়া যাবে।’

কথা চলতেই আগ বাড়িয়ে চা দোকানি আব্দুস সালাম বলেন, ‘সাবেক ছাত্র নেতা মফিজুল হক সরকার ও কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির মাঝে মনোনয়ন লড়াই জমে উঠেছে, এমনটি শোনেছি আমরা। দু’জনেই ভালো প্রার্থী। আমরা চাই তাদের একজনকে নৌকার মাঝি করা হোক।’

সূত্র জানায়, পলাশবাড়ি উপজেলার ভাবানীপুর গ্রামের সন্তান মফিজুল হক সরকার এমেক্স নিটিং এন্ড ডায়িং ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিদের হটাতে তিনি একাত্তরের রণাঙ্গণে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথমে ৬ নং এবং পরবর্তীতে ১১ নং সেক্টরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হওয়ার কারণেই মফিজুল হক সরকার চাকরি জীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি বঞ্চিত হন। ১৯৮৭ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের আহ্বানও সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে আলোচিত হন। পরবর্তীতে মেজর পদে থেকেই তাকে অবসরে যেতে হয়।

স্থানীয়রা জানায়, চাকরি জীবন থেকে অবসরের পর সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন মফিজুল হক সরকার। দুই উপজেলাতেই তিনি মসজিদ মাদ্রাসাসহ বহু ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি দান-অনুদান দিয়েছেন। সব সময় স্থানীয় দরিদ্র অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে তাকে নিয়ে ভোটারদের ভাবনা ইতিবাচক।

সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মাহমুদুল হক উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন করে তাকে ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে তিনি আলোচিত।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি দলীয় প্রার্থী হিসেবে জোর আলোচনায় রয়েছেন। তাকে নিয়ে ভোটাদের মাঝে স্বত:স্ফূর্ততা রয়েছে। তবে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।

আসনটিতে সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকারের জ্যেষ্ঠ সন্তান ড. ফয়সাল ইউনুসও উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছেন। যদিও মাঠের আলোচনায় শোনা যাচ্ছে তিনি দ্বৈত নাগরিক। তবে এই তথ্যের সত্যাসত্য নিশ্চিত করতে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

কালের আলো/এপিএস/এসআর