ময়মনসিংহে বেড়েছে অবৈধ গর্ভপাত, নজরদারি নেই ক্লিনিকপাড়ায়

প্রকাশিতঃ 8:34 pm | May 01, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

সড়কের পাশের নর্দমা কিংবা ডাস্টবিনে মিলছে নবজাতকের মরদেহ। একদিন নয় একাধিকবার ঘটছে এমন ঘটনা। অপরিণত শিশুর ভ্রুণ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে বা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে পুলিশ দায়িত্ব সারে।

তবে বরাবরই নজরদারির আওতায় আসেনি অবৈধ গর্ভপাতের সেন্টার হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ নগরীর নাম সর্বস্ব ক্লিনিকগুলো। আইনি ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে সরকারি হাসপাতালের বদলে অনেকেই অবৈধ গর্ভপাতের জন্য বেছে নিচ্ছেন এসব ক্লিনিককে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ গর্ভপাতের মতো অপরাধ ঘটিয়ে এক শ্রেণির ক্লিনিক মালিকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

গত রোববারও (২৯ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২ টার দিকে নগরীর বাঘমারা এলাকার নর্দমা এবং ভাটিকাশর ডাস্টিবন থেকে ৭ ও ৯ মাস বয়সী দু’টি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের পর অবৈধ গর্ভপাতের বিষয়টি আবারো আলোচনায় ওঠে এসেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অবৈধ গর্ভপাত বাণিজ্যের ‘আখড়া’ হিসেবে পরিচিত ক্লিনিকগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।

স্ব:প্রণোদিত হয়ে অবৈধ গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে একজন নারী আজীবন মাতৃত্বের স্বাদ হারাতে পারে। অনিরাপদ গর্ভপাতের কারণে তারা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: খুরশিদা জাহান।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহে অবৈধ গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের কারণেই অবৈধ গর্ভপাতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে অপরিণত ভ্রুণ ফেলে দেয়া হচ্ছে নর্দমা কিংবা ডাস্টবিনে।

কোন কোন সময় স্থানীয়রা বিষয়টি আঁচ করতে পারলে পুলিশকে খবর দেয়। আবার কোন কোন সময় ড্রেনের পানির তোড়ে ভেসে যায় অপরিণত নবজাতক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের আগষ্টের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের একটি খাল থেকে একটি ছেলে ও দু’টি মেয়ে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ ওই মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ওই সময়েও কোতোয়ালী মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে নবজাতকগুলোর মরদেহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা খালে ফেলে গেছে।’

সূত্র মতে, এসব নবজাতক পুলিশ উদ্ধার করলেও কে বা কারা এ অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তা সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি অবৈধ গর্ভপাত সেন্টার হিসেবে পরিচিত নাম সর্বস্ব ক্লিনিকগুলো’র কোন মালিককেও এ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি।

তবে এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকগুলোতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বা অবৈধ গর্ভপাত ঘটনানোর বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসন ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের। তারা পুলিশের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সূত্র জানায়, নগরীর ভাটিকাশর, বাঘমারা, ব্রাক্ষপল্লী, চরপাড়া, মাসকান্দা, ধোপাখোলা মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে প্রতারণার মহাৎসব চলছে। মূলত এসব ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র।

এ চক্রের মাধ্যমেই অবৈধ গর্ভপাত ঘটাতে এসব ক্লিনিকে রোগী ধরে আনা হয়। প্রতিটি গর্ভপাতের জন্য ক্লিনিক মালিককে দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকাতেও গিয়ে ঠেকে। তবে বেশিরভাগ গর্ভপাত ঘটানোর কাজই করেন হাতুড়ে চিকিৎসক, নার্স ও আয়ারা।

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ নগরীতে ১২৬ টি ক্লিনিক ও ৬৮ টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স রয়েছে। বাদ বাকী প্রায় অর্ধ শতাধিক ক্লিনিক বা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারই অবৈধ। এরা মূলত পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সের জন্য আবেদন দেখিয়ে চুটিয়ে প্রতারণা করে আসছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা: আব্দুর রউফ বলেন, অবৈধ গর্ভপাত যে কেবল ক্লিনিকেই হচ্ছে এটা ঠিক নয়। বাসা-বাড়িতেও অবৈধ গর্ভপাত হতে পারে। তবে লাইসেন্সবিহীন নাম সর্বস্ব ক্লিনিকগুলোতে অভিযান পরিচালনা করতে আমি একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি।

কালের আলো/এমকে/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email