মহাদেবপুরে এমপির নির্দেশে সামাজিক বনায়নে গাছ কর্তন

প্রকাশিতঃ 8:27 pm | April 06, 2018

নওগাঁ প্রতিনিধি, কালের আলো:

নওগাঁর মহাদেবপুরে স্থানীয় সাংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের বিরুদ্ধে সামাজিক বনায়নে রাস্তার গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমপির নির্দেশে মঙ্গলবার উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের কাইয়ামারি মোড় থেকে ধনজোইল মোড়ের রাস্তায় সামাজিক বনায়নের উপকার ভোগীদের চারটি ইউক্যালিপটাস গাছ কাটা হয়। ইটভাটা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে তিন দফায় প্রায় ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত দশ বছর আগে উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের কাইয়ামারি মোড় থেকে ধনজোইল মোড়ের প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় সামাজিক বনায়নের আওতায় ১ হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয়। উপকার ভোগীর সংখ্যা ১৮ জন। উপকারভোগীরা পাবেন ৫৫ শতাংশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ২৫ শতাংশ, রাজস্ব ১০ শতাংশ এবং টিএসএফ পাবে ১০ শতাংশ লাভ। ওই এলাকার গাছ কাটতে এযাবত কোন টেন্ডার দেয়া হয়নি।

সরেজমিনে জানা গেছে, কাইয়ামারি মোড় থেকে ধনজোইল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো আছে। কাইয়ামারি মাঠের মধ্যে স্থানীয় সাংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের একটি ইটভাটা আছে। যার নাম ফয়েজ উদ্দিন তরফদার বিক্সস (এফটিবি)। কাইয়ামারি মোড় থেকে ধনজোইল যেতে রাস্তার দক্ষিন পাশে ইটভাটা এবং উত্তর পাশে ইটভাটার জন্য মাটি রাখা আছে।

রাস্তার উত্তর পাশে ইটভাটার জন্য যেখানে মাটি রাখা আছে সেখানে রাস্তার প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত কোন গাছ নাই। অর্থ্যাৎ কেটে ফেলা হয়েছে। সবগুলো গাছ একবারে না কেটে কিছুদিন পর পর কাটা হয়েছে। আর কেউ যেন বুঝতে না পারে সেখানে কোন গাছ ছিল কিনা। সেজন্য গাছের গোড়াসহ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

গত ৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বেলা ১২টার দিকে চার-পাঁচ জন শ্রমিক গাছ কাটার কাজ করছিলেন। তারা এমপির নির্দেশে দিন মজুরিতে কাজ করছেন বলে জানান। এভাবে তিন দফায় প্রায় ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। আর গাছগুলো এমপির নির্দেশেই কাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। কোন কোন গাছ কাটতে হবে তা নাম্বারিং করা হয়নি এবং কোন টেন্ডার দেয়া হয়নি। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে গাছ কাটার ফলে বেশির ভাগ উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার কিছ উপকারভোগীরা সুবিধা লুটছেন।

উপকারভোগী আজামুদ্দিন বলেন, ইতোপূর্বে আমরা ৬টি গাছ কেটে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এমপি স্যারের নির্দেশে মঙ্গলবার আরো ৪টি গাছ কাটা হয়। তবে বন কর্মকর্তাকে কাটার বিষয় জানানো হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপকারভোগী বলেন, গাছ কাটার তো এখনো বয়সই হয়নি। তারপরও বেশকিছু গাছ কাটা হয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। তবে উপরের কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। মোট কথা আমরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শীবনাথ মিশ্র বলেন, উপকারভোগীদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদের কোন অঙ্গীকারনামা হয়নি। বনবিভাগের সাথে অঙ্গীকারনামা হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় গাছগুলো লাগানো হয়েছে। রাস্তা থেকে যে গাছ কাটা হয়েছে তা আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখব।

মহাদেবপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: আহসান হাবিব বলেন, উপকারভোগীদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদের একটি অঙ্গীকারনামা হয়েছে। যার কারণে উপকারভোগীরা সেখানে গাছগুলো লাগিয়েছেন। যদি গাছ কাটার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে উপকারভোগীরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করবেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিদের্শনা দিলে তারপর আমরা গাছ নাম্বারিং করব এবং গাছ কাটার জন্য টেন্ডার দিবো। এরকম কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং গাছ কাটার বিষয়টিও জানা নেই।

স্থানীয় নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) সাংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম বলেন, সামাজিক বনায়নে রাস্তায় গাছগুলো লাগানো হয়েছে। রাস্তার পাশে আমার ইটভাটা। ইটভাটায় আসা-যাওয়ার জন্য রাস্তার প্রয়োজন। যার কারণে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের বলেই আমার নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে। তবে ৫০টি গাছ কাটার বিষয়টি সঠিক না।

 

কালের আলো/সুলতান/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email