গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিতঃ 9:23 pm | March 24, 2018

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা:

ময়নসিংহের গৌরীপুর টু শ্যামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি সংস্কারে ফের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনা ও ধুলাবালি পরিষ্কার না করে তার ওপরেই চলছে কার্পেটিং। পুরনো কার্পেটিং উপড়ে ফেলে দেয়ার নিয়ম থাকলেও সেটা না করে কার্পেটিংয়ের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে সংস্কার কাজে।

এছাড়া বিটুমিন মিশ্রণে ত্রুটির কারণে উঁচু-নিচু স্তর তৈরি হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে নতুন মাটি ভরাট ছাড়াই কার্পেটিং করায় ধসে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এদিকে, উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে মেসার্স বাবুল এন্টারপ্রাইজ ৮৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৬ টাকায় রামগোপালপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া পর্যন্ত সংস্কার করে। চলতি বছর একই সড়কে সমিরণ চৌধুরী ১ কোটি ৮৫লক্ষ ৬০হাজার ৬৫২ টাকায় সংস্কার ও মেরামত করে শ্যামগঞ্জ পর্যন্ত। এছাড়াও ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে এই সড়কটিতে আরও ৪৩ লাখ টাকার সংস্কার কাজ করা হয়।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানের কাজের কারণে বারবার সংস্কার করার পরেও সড়কটি পুনরায় দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, এ সড়কটি পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচীর অধীনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে শ্যামগঞ্জ জিসি সড়ক ভায়া গৌরীপুর জিসি মেরামত কাজের (৬৪৫০-১৩৭৫৩ মি) জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে.কে. এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে ২ কোটি ৭৭লাখ ৯৯হাজার ৪৫৪টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কাজটির উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।

উদ্বোধনের পর থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কটি দ্রুত গতিতে মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু করেছে। তবে নানা অনিয়মের কারণে এ সংস্কারকৃত সড়ক কতোদিন টেকসই হবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ওপরে ফেলা কার্পেটিং থেকে পাথর আলাদা করে সেই পাথর দিয়েই চলছে সংস্কার কাজ। সড়ক সংস্কারের জন্য আনা সাদা পাথরও সঠিক পরিমাণে দেয়া হচ্ছে না।

প্রাইমকোটে দুই কেজি বিটুমিনের সঙ্গে দুই কেজি কেরোসিন মিশিয়ে ওভার লেয়িং করে তা ছয় থেকে আট ঘণ্টা রাখতে হয়। এরপর পাথর দিয়ে ওভার লেয়িং করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিটুমিন আর কেরোসিন দিয়ে প্রাইমকোট তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই দেয়া হচ্ছে পাথরের ওভার লেয়িং ঢালাই।

সড়কের গাভীশিমুল, মেসিডেঙ্গী, সূর্যকোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। অনিয়মের কারণে সড়ক সংস্কারের দু’চার দিন যেতে না যেতেই সড়কের বিভিন্ন অংশ উঁচু-নিচু ও অমসৃণ দেখা যাচ্ছে। সংস্কার করা সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে অল্প অল্প পিচ ঢালাই উঠে গেছে।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, “অর্থের অপচয় নয়। প্রয়োজন সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প। একই সড়ক কেনো বারবার ভাঙছে, তা নিরুপণ করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ সড়ক সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন।”

এ প্রসঙ্গে কাজ তদারকি কর্মকর্তা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ জানান, ধুলাবালি পরিষ্কার ছাড়া কোনোভাবেই প্রাইমকোট করার সুযোগ নেই।

তবে আরেক তদারকি কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান জানান, পুরাতন রাস্তার পাথর (ব্লেকটপ) ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। সেটা রিপেয়ারিং করে নিতে হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. ওয়াহেদুল হক জানান, যেসব স্থানে অসমানের সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে লেয়ার লেভেলিং করে দেয়া হবে। মিশ্রণে ত্রুটির কারণে এমন হতে পারে।

কালের আলো/এমএ