নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পদ্মা সেতুতে ‘এক লাখ মানুষের মাথা কেটে রক্ত দিতে হবে’ এমন গুজবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির এ যুগেও অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক ও অমানবিক গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সরকারের নীতি নিরধারকদের মধ্যে কেউ কেউ বিস্মিতও।

২০১৫ সালে পদ্মা সেতুর পিলারের কাজ শুরুর সময় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কমীদের গরু জবাইয়ের গুজবকে ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

কাটা মাথা লাগার গুজবে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে সেতু নির্মাণে শুরু থেকে দেশি ও বিদেশি নানা জটিলতা ও ষড়যন্ত্রের পথ পেরুতে হলেও এমন গুজব পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্ন টা করে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা এ সেতুর দুই কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান।

শিগগিরই সেতুর পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শতভাগ শেষ হবে বলে এ সময়টাকেই গুজব ছড়ানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে মহাজোট সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কথিত চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে তান্ডবের মত এখন যেন তৎপরতার সুযোগ যেন না পায় গুজব বড় ধরনের দুর্ঘটনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্ত্রিয় হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারকে বিপদে ফেলতে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উন্মাদের মত এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে । রাজপথেই শুধু আন্দোলন করলে চলবে না, সাইবার যুদ্ধেও নামতে হবে ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েক দিন ধরে ছড়িয়ে দেওয়া গুজবে বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর জন্য প্রয়োজন এক লাখ শিশুর মাথা । এ জন্য সারা দেশে ৫০টি দল বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়েও বাড়ি থেকে অপহরণ করছে শিশুদের। এ বিষয়ে বিভিন্ন ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে স্ট্যাটাস পোস্ট করতে দেখা গেছে। এতে অনেকেই ঘাবড়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে ম্যাসেঞ্জারে ইনবক্স পাঠিয়ে একে-অপরকে সতর্ক করছেন নেটিজেনদের কেউ কেউ । অনেকে না বুঝে এ রকম কুসংস্কারে গা ভাসিয়েছেন।

গুজবে এমনও বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সী মানুষ অপহৃত হচ্ছে। যদিও কোনো এলাকার আইনশৃঙ্খলা অপহরণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আতঙ্কিত হয়ে কোথাও কোথাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ।

পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের রক্ত বা মাথা লাগবে এমন গুজব বা অপপ্রচার এটাই প্রথম হয়নি । আগে গত বছরের আগস্টে একই রকম গুজব রাজবাড়ী জেলায়। সে সময় রাজবাড়ীর সদর উপজেলায় ১৫ দিনের মধ্যে তিন নারী ও এক শিশুকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । পদ্মা সেতুর জন্য রক্ত লাগবে বলে হত্যাকান্ডগুলো ঘটছে বলে অপপ্রচার চালানো হয় তখন ।

গুজব রুখতে বসে নেই পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষও। সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে বলে ছড়ানো গুজবে বিভ্রান্ত না হতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ । মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ায়। এর কোনো সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনতদন্ডনীয় অপরাধ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। মুল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯২টি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ৪২টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, যা এখন দৃশ্যমান ।

সেতুটির নির্মাণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্যের খবরটি আসতে যাচ্ছে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে । সেতুর সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ পাইল ২ কাজ শতভাগ শেষ হবে এ সময়ের মধ্যে । ফলে পদ্মা সেতুর নকশী জটিলতার কার্যকর সমাধান মেলার পাশাপাশি কাজের গতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কালের আলো/এআর/এমএম