নেগেটিভ নিউজ করলে অনুমতি নিতে হবে, সাংবাদিকদের প্রতি ইউএনও
প্রকাশিতঃ 5:29 pm | July 05, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক:
‘সিরাজগঞ্জে কামারখন্দ উপজেলায় জেলার সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে বা সংবাদ সংগ্রহ করতে প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি এবং আমার (ইউএনও) কনসার্ন নিতে হবে’- সম্প্রতি কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর আলমের এমন বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ইউএনওর ওই বক্তব্যে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ইউএনওর দুর্নীতি সংবাদ যাতে কেউ প্রকাশ করতে না পারে সে জন্যই এমন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে কামারখন্দ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়াকে উদ্দেশ করে ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে (কামারখন্দে) বাইরের সাংবাদিক এক দিনে এসে বুঝবে? যেকোনও নেগেটিভ নিউজ করলে আমার সঙ্গে কথা বলে তারপর করবে। বাইরের সাংবাদিক যেন আমার কাছে কম আসে। আমার কথা হচ্ছে প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে আসবে। আপনি সভাপতি বা আহ্বায়ক, বাইরের সাংবাদিক আসলে নক করে আসবে।’
‘গঠনতন্ত্র করেন, বাইরের সাংবাদিক বা জেলার সাংবাদিক আসলে সভাপতিকে জানিয়ে প্রতিবেদন করবে- এটা গঠনতন্ত্রের মাঝে ঢোকান। দরকার হলে হেলাল সাহেবকে (জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি) বলে দেবো। হেলাল সাহেবের সঙ্গে অলরেডি কথা হয়েছে। আমি বলে দিয়েছি, যেকোনও সাংবাদিক আসলে সভাপতির সঙ্গে কনসার্ন করে তারপর যেন মুভ করে। কারণ, হুদাই একটা প্রবলেম বের করে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে, অথচ এসব কিছুই না। তাই না? আমাদের সাংবাদিক রিপোর্ট করবে, তাদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের। কামারখন্দের সাংবাদিকদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের। যদি কোনও ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার হয় দেবো। সমস্যা কি? আমাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মতো কোনও অভাব নাই। আছে? বিভিন্ন জায়গা আছে। আমরা ফিন্যান্সিয়াল সুবিধা দেবো, সমস্যা আছে আপনার? বাইরের সাংবাদিক কেন এখানে আসবে?’
এ বিষয়ে কামারখন্দ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘গত ৫ থেকে ৬ দিন আগে ইউএনও কামারখন্দের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। এতে তিনি বলেন, ‘কোনও নেগেটিভ নিউজ থাকলে জেলার সাংবাদিকরা কামারখন্দে এসে নিউজ করতে চাইলে অন্ততপক্ষে উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। নিউজ প্রকাশ করার আগে উপজেলার প্রধান হিসেবে আমাকেও এ বিষয়ে অবহিত করার উচিত। অডিওটি ফেসবুকে প্রকাশ হওয়ার পর আমি বিষয়টি জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতিকেও জানিয়েছি।’
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রবিন ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জেহাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। আমরা তার এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার উপজেলায় কোনো নেগেটিভ নিউজ হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে অনেক সময় জবাবদিহি করতে হয়। যেহেতু সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, তাই কামারখন্দের যে কোনো নেগেটিভ নিউজ করার আগে জেলার সাংবাদিকদের উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাসহ আমার মতামত নিলে ভালো হয়। আমি কাউকে আহত করার জন্য এমন মন্তব্য করিনি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফিরোজ মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কামারখন্দ ইউএনওর অডিও বক্তব্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে অডিওটি শুনতে পারেনি। অডিওটি শুনে কামারখন্দের ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে তারপর আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এর আগে এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।
কালের আলো/এনএ/এমআর