কক্সবাজার সৈকত ঘিরে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে
প্রকাশিতঃ 8:10 pm | August 02, 2025

কক্সবাজার প্রতিবেদক, কালের আলো:
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কক্সবাজারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে সমুদ্র সৈকত ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টেই প্রাণ গেছে ১২ জনের। বাকি ৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন জেলার কুতুবদিয়া, উখিয়া, রামু, মহেশখালী ও টেকনাফসহ অন্যান্য উপজেলায়।
পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করা দেশের অন্যতম বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) সম্প্রতি এসব তথ্য প্রকাশ করে। সংস্থাটি পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে সংস্থাটি কাজ করছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
সি সেইফ প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ২০১৪ সাল থেকে গেল প্রায় ১০ বছরে ৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। যারা প্রত্যেকেই সৈকতে গোসলে নেমে ভেসে গিয়ে মারা গেছে। তিনি বলেন, এ সময় ৭৯৫ জনকে পানি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে সি সেইফ লাইফগার্ড।
তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নিয়মিত যে পরিমাণ পর্যটক থাকে তাতে এই বেসরকারি লাইফগার্ড খুবই অপ্রতুল। সরকারি ছুটির দিন ও যেকোনো উৎসবের ছুটিতে পর্যটকের সংখ্যা পার হয় লাখের অধিক।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সৈকতে যে পরিমাণ পর্যটক ছুটিতে আসে মাত্র ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মী দিয়ে সেটি মোকাবিলা সম্ভব না। তাও আবার দুই সিফটে ভাগ হয়ে ১৩ জন করে তারা দায়িত্ব পালন করেন। যা খুবই অপ্রতুল।
এ বিষয়ে সমাজকর্মী ও পর্যটন উদ্যোক্তা কলিম উল্লাহ বলেন, সরকারের উচিত বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে সৈকতে লাইফগার্ড সেবা চালু করা। এ ছাড়া কোথায় গোসলে নামবে এবং কোথায় গোসলে নামা যাবেনা সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া।
ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘিরে বারবার পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও প্রতিরোধে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। একটি সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও তারাও এতে উদ্যোগী নন। যারা কেবল ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে প্রতিবছর দুই লাখ ৩৫ হাজার মানুষ প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায়। তারমধ্যে বাংলাদেশে ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। গড় হিসাব করলে দেশে প্রতিদিন ৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জনই শিশু।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কক্সবাজার জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সংস্কৃতিকর্মী সৌরভ দেব বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধে কেবল বেসরকারি উদ্যোগ নয়, সরকারি উদ্যোগও জরুরি। লাইফগার্ড সেবা সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা উচিত। কোথায় গোসল করা যাবে, কোথায় যাবে না—সেটি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
কালের আলো/এইচএন/এমএএইচ