গুলশানে চাঁদাবাজি: গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা অপু ৪ দিনের রিমান্ডে
প্রকাশিতঃ 5:45 pm | August 02, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে সাবেক এমপির বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপুকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার মহানগর হাকিম নাজমিন আক্তার এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান অপুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অপুর পক্ষে তার আইনজীবী মো. শাহ আলম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অপুর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তারা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এ মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের এরকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী আরও কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করেছে মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়।
“এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামিদের ও তাদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এছাড়াও বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।”
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ওয়ারী থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানিয়েছিলেন।
চাঁদাবাজির ওই ঘটনায় এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই পাঁচজনের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ওই পাঁচজন।
পরে ‘সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
পাশপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা রিয়াদের একটি বাসা থেকে সোয়া দুই কোটি টাকার চারটি চেক উদ্ধারের তথ্য দিয়েছিলেন তালেবুর রহমান।
এই চেকগুলো ‘ট্রেড জোন’ নামের একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া। প্রাপকের নাম ও তারিখবিহীন চেকগুলোর দুটি এক কোটি করে এবং একটি ১০ লাখ ও অপরটি ১৫ লাখ টাকার চেক। ওই বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় এবং ট্রেড জোনের অফিস কলাবাগান এলাকায়।
বৃহস্পতিবার রিয়াদের বাড্ডার আরেকটি বাসা থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে গুলশান থানা পুলিশ।
এই অর্থ সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ‘চাঁদা নেওয়া’ ১০ লাখ টাকার একটি অংশ বলে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বুধবার রাতে রিমাণ্ডের সময় সে স্বীকার করে বাড্ডাতে তার একটি ভাড়া করা বাসা রয়েছে। এরপর ভোরে সেখানে গিয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার হয়।”
রিয়াদের সঙ্গে নাম আসা অপু গুলশান থানার মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে ঢাকার ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তারের কথা শুক্রবার জানানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাড্ডার তিন কক্ষের ওই বাসার একটি কক্ষে থাকতেন রিয়াদ। অন্যান্য রুমে ৪/৫ জন করে থাকেন। রিয়াদের রুমটি ‘আধুনিক জিনিসপত্র’ দিয়ে সাজানো।
রিয়াদ যেসব দামি পোশাক পরতেন, এ ধরনের পোশাক তার আগের বাসায় পাওয়া না যাওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন পরের বাসার সন্ধান পায় পুলিশ।
রিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেছিলেন, সাবেক সংস সদস্যের বাসা থেকে তারা যে ১০ লাখ টাকা ‘চাঁদা নিয়েছিল’ তার মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগে পেয়েছিল রিয়াদ। এ কাজে তার মূল অংশীদার কাজী গৌরব অপুসহ অন্যরা বাকি টাকা নেয়।
ওসির ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রিয়াদ ও অপু মিলে একটি ‘গ্রুপ’ করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করত। তারা জমি দখলের পাশাপাশি ‘মব সন্ত্রাসের’ ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করত। এটাই তাদের ‘পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল’। ২৬ জুলাই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা।
এক পর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন।
এর পর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় স্বজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যায়।
২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আবার রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। ওই সময় অপু দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কালের আলো/এএএন