অভাবে বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করলেন বাবা, অতঃপর…

প্রকাশিতঃ 7:52 pm | May 11, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন এক বাবা। চোর চোর বলে মারধর করছিলেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সেখানে প্রকাশ পেলো আসল ঘটনা।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম।

শনিবার(১১ মে) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তার পোস্টটি।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম।

কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।

একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’

আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’

আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’ সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল।

মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম।

সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।’

ঘটনাটির বিষয়ে এসি জাহিদুল বলেন, ‘ঘটনাটি আমার কাছে খুবই স্পর্শকাতর লেগেছে। নাম-পরিচয় রেখে তাকে ছেড়ে দেই। আমি যেটা করেছি মানুষ হিসেবে এমনটা করা খুবই স্বাভাবিক। আমি জানি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ দুধের প্যাকেট চুরি করবে না।’

‘তিনি মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করত। ইতোমধ্যে সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

চাকরি পাচ্ছেন সেই বাবা
প্রথম সারির বেশ কিছু গণমাধ্যম জাহিদুলের স্ট্যাটাসটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপরেই সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়।

শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের নির্দেশে সেই বাবা এবং বাচ্চার দায়িত্ব নিচ্ছে সুপার শপ কর্তৃপক্ষ। আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় ওই বাবাকে খবর পাঠিয়েছি, আমি নিজে খিলগাঁও আউটলেটে আছি। তিনি এলে আপাতত এ মাসের প্রয়োজনীয় সব বাজার তাকে দিয়ে দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১২ মে রবিবার তাকে সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক নিজেই তার ইন্টারভিউ নেবেন। যোগ্যতা অনুযায়ী ওই বাবা এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবেন।’

কালের আলো/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email