‘বাড়িত নয়া ঘর হচি, ট্যাকাও আইসে কিন্তু মোর বাবা আবু সাঈদ নাই’

প্রকাশিতঃ 11:44 am | July 16, 2025

রংপুর প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘বাড়িত নয়া ঘর হচি, ট্যাকাও আইসে। কিন্তু মোর বাবা (আবু সাঈদ) তো নাই, বুকটা খালি করি গেছি। মোর খালি বুকটা কি কেউ পূরণ করি দিব্যার পারবি। মুই যদি কোনোভাবে আন্দোলনের কথা জাননু হয়, তাহলে যেভাবেই হোক আবু সাঈদক মোবাইল করি বাড়িত ডাকি নিয়া আননু হয়। তাহলে মোর বাবা আজও বাঁচি থাকলি হয়’ এভাবে কথাগুলো বলেন চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মা মনোয়ার বেগম।

কথা বলার মাঝেই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ঝরে মায়ের। আবু সাঈদের কথা মনে পরলেই তিনি আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ টিশার্ট বের করে উল্টে উল্টে গুলিতে ছিদ্র হয়ে যাওয়া অংশ দেখেন। সেই টিশার্ট ধরে আজও কাঁদেন ছেলের জন্য।

তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, প্রায়দিন হামার বাড়িত মানুষ আইসেচোল, সবাই কবর জিয়ারত করে, চলি যায়, কিন্তু মোর মনত ছেলে হারার দুঃখতো কমে না। মোর ছেলে তো ফিরি আইসবে না।

এদিকে, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, মোর ছেলে মারা যাওয়ার একবছর হইলো, কিন্তু সউগ আসাকিক ধরবার পাইল না। কুনদিন ধরবে আর কুনদিন বিচার করবে। বাঁচি থাইকতে কি ছেলে হত্যার বিচার দেইকপার পামো কিনা জানি না।

তিনি বলেন, এ্যালা অনেক রাজনৈতিক দল আইসে, তামার দলত নিবার চায়। হামরা সিদ্ধান্ত নিচি, কোনো দলত হামরা যাবার নাই। হামরা নিরপেক্ষ থাকমো। হামার ছেলে দেশের জন্যি জীবন দিচে।

এসময় তিনি আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে বলেন, হামার ছেলের ‘স্বপ্ন ছিল চাকরি করবে, হামার পরিবার স্বচ্ছল করবে। হামারো স্বপ্ন ছিল ছেলে চাকরি করবো, কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না।

অন্যদিকে, শহীদ আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন বলেন, শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সেই অনুরেপ্ররণায় দেশের সকল মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বৈরাচার সরকারকে পরাজিত করেছিল। পতন হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই প্রেরণার মানুষ আবু সাঈদের বিচার চলছে ধীর গতিতে। এখনও আসামিদের ধরা সম্ভব হয়নি। কবে সবাই ধরা পরবে, আর কবে আমরা বিচার দেখবো। সেই আশায় প্রতিদিন প্রহর গুনি। এসময় তিনি সকল শহীদের হত্যাকারীদের বিচার কামনা করেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের আজকের (১৬ জুলাই) দিনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এই ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। দেশ জুড়ে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র জনতার আন্দোলনে। রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে তৎকালীন সরকারের। আর ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে নতুন নেতৃবৃন্দের। ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও আত্মত্যাগ গোটা বিশ্বকে চমকে দেয়। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের থেকে সরকার পতনের আন্দোলন রূপ নেয় মূলত রংপুরের আবু সাঈদের বুকে গুলি এবং রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে।

কালের আলো/এমডিএইচ