স্থায়ী সনদ ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিতঃ 10:30 am | July 16, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
দেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১১৬টি। এর মধ্যে স্থায়ী সনদ নিয়েছে মাত্র ২০টি। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৯৬টির স্থায়ী সনদ নেই। তবে এক যুগের বেশি সময় পার হয়ে গেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদ অর্জন করতে না পারা এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির চোখে ‘আইন ভঙ্গকারী’। দ্রুত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে ব্যবস্থা নেবে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ১২(১) ধারা অনুসারে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই স্থায়ী সনদ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের দেওয়া সাময়িক অনুমতির মেয়াদ সাত বছর। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে সরকার তিন দফায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিতে পারে। এ সময়ের মধ্যে আইনে নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এরই মধ্যে ১২ বছরের বেশি সময় পার হওয়ায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইন অনুসারে আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। আবার, ২০১০ সালের আইনটি সময়োপযোগী নয় বলে বর্তমান সরকার মনে করছে। এ কারণে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত আইনের খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় একাধিক কঠোর শর্ত ও বিধিনিষেধ প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বর্তমানে এই জরিমানার পরিমাণ মাত্র ১০ লাখ টাকা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমতির সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ নিতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এদিকে, ইউজিসি জানায়, শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করলেই সনদ দেওয়া হয় না। বরং আরও বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন যায় এবং শর্তগুলো পূরণ করছে কি না তা যাচাই-বাছাই করা হয়। সেই আলোকে পরবর্তী সময়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় শর্ত পূরণ না করেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদের আবেদন করে, তখন আর পরিদর্শনেও যায় না ইউজিসি।
সর্বশেষ স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, খাজা ইউনূস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী সনদ নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থায়ী সনদ পেতে হলে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেই হয় না, আরও বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্ত পূরণের পর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদের আবেদন করে তাদের ক্যাম্পাস সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পর সবকিছু বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ দেওয়া হয়।’
কালের আলো/এমএএইচএন