‘ফণী’ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির ঘোষণায় সাহসের সঞ্চার উপকূলবাসীর

প্রকাশিতঃ 9:16 pm | May 02, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

‘ফণী’ কে বলা হচ্ছে অতি প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঝড়টি ভারতের ওপর দিয়ে এসে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হানবে বাংলাদেশে। ঘন্টা হিসাবে সেটি’র সম্ভাবনা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে।

‘ফণী’র আঘাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় তাই সর্বশক্তি নিয়েই মাঠে নেমেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। উপকূলীয় ১৯ জেলায় নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রতি মুহুর্তের আপডেট রাখছেন। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের।

আরো পড়ুনঃ ‘ফণী’ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সকল ডিভিশন ও এরিয়া হেডকোয়ার্টার প্রস্তুত : সেনাপ্রধান

শুক্রবার (০৩ মে) জুম্মায় মসজিদে মসজিদে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বসে নেই দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টানা ক’দিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানও দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বৃহস্পতিবার (০২ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ যত শক্তিশালীই হোক, তা মোকাবিলা করতে প্রশাসন পুরোপুরি সক্ষম। ‘ফণী মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলাকে।

এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উঠলেই অবধারিতভাবে অগ্রভাগে চলে আসে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নাম। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগেই বুক চিতিয়ে দেশ ও মানবতার স্বার্থে এগিয়ে সময়ে সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সেনাবাহিনী।

১৯৮৮ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে ম্যারিএন, ভয়াবহ সিডর বা আইলায় সেনাবাহিনী দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা জানে দেশবাসী।

ব্যতিক্রম নয় এবারো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলাতেও। ইতোমধ্যেই এই ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় নিজ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার বিষয়টি জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সময়কে ধারণ করে পথচলা অকুতোভয় ও দেশপ্রেমিক এই চার তারকা জেনারেল বলেছেন, ‘ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে আশা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সকল ডিভিশন ও এরিয়া হেডকোয়াার্টারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সাভার সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জে সেনাবাহিনীর বার্ষিক ফায়ারিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সেনাবাহিনী প্রধানের এই বক্তব্যে শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন উপকূলবাসীর মাঝে যেন নতুন সাহসের সঞ্চার হয়েছে।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, সেনাবাহিনী আগাম কোনো নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করে না। কারণ, দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সেনাবাহিনীকে স্থায়ী নির্দেশনাই দেয়া রয়েছে। তাই ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে’, বলেন সেনাপ্রধান।

আরো পড়ুন: মনিটরিং করছেন সেনাপ্রধান, ‘ফণী’ বিপর্যয় রুখতে মাঠে সেনাবাহিনী

‘সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট ডিভিশনগুলোর পক্ষ থেকে বেসামরিক প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি এবং দুর্যোগের আগে এবং দুর্যোগ চলাকালে বা পরবর্তী যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্যে সেনাবাহিনী পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত রয়েছে’ যোগ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।

একই দিন বিকেলে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদ পেশাগত কাজেই দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন। নিজের প্রতিটি বক্তব্যেই তিনি প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিজ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেছেন।

বরাবরই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় সেনাবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ঝরেছে মুজিব কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখেও। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগের সময় আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের জানমাল রক্ষা করছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেশ গঠনেও তাদের ভূমিকা’র পাশাপাশি বিদেশেও আমাদের সেনাবাহিনী তাদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।’

বাংলাদেশ সেনবাহিনী পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধস, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর অবদান রেখে চলেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশ ও মানুষের জন্য বারবার জীবনবাজী রেখেছেন।

দেশ মাতৃকার কাজে উৎস্বর্গ করেছেন নিজেদের জীবনও। পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন ও মান উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য।

নি:স্বার্থ সেবাদানের উজ্জ্বল নজির স্থাপন করে দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপক আস্থাও অর্জন করেছেন সেনাসদস্যরা। সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সেনাবাহিনী দেশ-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দেশের জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয় সেনাবাহিনীকে। জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনবাহিনী আজ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের আধুনিক, যুগোপযোগী সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে করেছে সুপ্রতিষ্ঠিত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অবদান বিশ্বে উদাহরণ।

কালের আলো/এইকেআ/এএএমকে

Print Friendly, PDF & Email