অপরাধীদের দুর্গে হানা সেনাবাহিনীর, সরকারের নির্দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 4:43 pm | June 19, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। ভেঙে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন। ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে উধাও হয়ে যায় পুলিশ। শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেই পুলিশি ব্যবস্থা পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করে। ভীতিকর অবস্থা ও নৈরাজ্য বন্ধে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট ঘোষণা দেন কোনভাবেই এই অন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় পাশে থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এরপর পঞ্চম দফায় চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (০৮ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়ায় সরকার। শুরু থেকেই ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধারে চলমান রয়েছে তাদের বিশেষ অভিযান। পরিচালনা করা হচ্ছে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়ার ৩৫ লাখ টাকা যাত্রীদের ফেরত দিয়েছে সেনাবাহিনী। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার নির্দেশনা দিলে সেই মোতাবেক নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছে তারা।

পঞ্চম দফায় ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা প্রাপ্তির পর বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

তিনি মব ভায়োলেন্স কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান।

২১ দিনে সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার ৯৯৬

সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত তিন সপ্তাহে সেনাবাহিনী ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ৯৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ সময়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ৯৯৬ জনের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী উল্লেখযোগ্য। সেনাবাহিনী গত ২৭ মে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কুষ্টিয়া জেলা থেকে শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইনের অপর দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত এবং শরীফকে পাঁচটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামোনিশন ও একটি স্যাটেলাইট ফোনসহ সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে।

  • ২১ দিনে সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার ৯৯৬
  • খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী বিশেষ সহায়ক ভূমিকা
  • ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়ার ৩৫ লাখ টাকা যাত্রীদের ফেরত দিয়েছে সেনাবাহিনী
  • মব ভায়োলেন্স অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে 
  • সীমান্তে পুশ-ইনের বিষয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক

এছাড়াও একইদিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আরও একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশন এলাকা হতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফরিদ আহমেদ বাবু ওরফে এক্সেল বাবুসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং ভূমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযানের ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৪ জুন মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প এলাকা থেকে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেলকে ১০ জন সহযোগীসহ সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার বুনিয়া সোহেলের বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, বিভিন্ন ধরনের ধারালো দেশীয় অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার করা হয়। গত ৫ জুন কক্সবাজারের মাঝিরকাটা এলাকায় কুখ্যাত শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, মাদক, চাঁদাবাজিসহ ২০টির বেশি মামলা রয়েছে। এ সময় একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ মোট ৪টি অস্ত্র, গোলাবারুদ, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়।

গত ৬ জুন কুষ্টিয়া জেলার দূর্বাচর এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর কবির লিপটনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযানে ছয়টি বিদেশি পিস্তল, একটি লং ব্যারেল গান, ১০টি পিস্তল ও ম্যাগজিন এবং সর্বমোট ১১৯ রাউন্ড অ্যামুনিশন উদ্ধার করা হয়।

সম্প্রতি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এই ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কোনো তালিকা করা হয়েছে কি না, আর হয়ে থাকলে এই বিষয়ে সেনাবাহিনী কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী বা যেকোনো সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের সময় যে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এক্ষেত্রে আমরা গোপনীয়তা রক্ষা করি। সামনেও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমাদের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গত তিন সপ্তাহে ৪৫২ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৪৭৬ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে। গত ৬ জুন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাভারের লুটেরচর এলাকায় একটি মদ তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ কারখানায় গ্যাস লাইটার তৈরির নামে অবৈধভাবে মদ তৈরি করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযানকালে ৮ হাজার ৬২০ লিটার মদ এবং মদ উৎপাদনের বিভিন্ন কাঁচামাল জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে অতিবৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সেনাবাহিনীর একটি দল জরুরি ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কার্যক্রম শুরু করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব হয় ও জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।

তিনি আরও বলেন, টানা ভারী বর্ষণে হবিগঞ্জের কিছু এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পূর্বের ন্যায় বন্যা দুর্গত পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গত ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা হবিগঞ্জ এলাকায় বন্যা দুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে। সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিরাপত্তা বিধানে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ২৭ মে সেনাসদরে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ঈদের পূর্বেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী বিশেষ সহায়ক ভূমিকা

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তায় মিরপুরের একটি চকলেট কারখানাকে সাত লাখ টাকা জরিমানাসহ সাময়িক বন্ধের আদেশ জারি করে। যার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়ার ৩৫ লাখ টাকা যাত্রীদের ফেরত দিয়েছে সেনাবাহিনী

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে এক হাজার ২৫৫টি যানবাহন থেকে ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ টাকা যাত্রীদের মধ্যে ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এমনটি জানান মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকালীন ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি অথবা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি রোধে সচেষ্ট ছিল।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে এক হাজার ২৫৫টি যানবাহন থেকে ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ টাকা যাত্রীদের মাঝে ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে ১৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং র‍্যাকারের মাধ্যমে ৯টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিকভাবে দেশের মানুষের পাশে কাজ করার চেয়ে ইচ্ছা, প্রবণতা, আন্তরিকতা, সততা এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য।

বিগত ঈদের তুলনায় এই বছরের ঈদে মৃতের সংখ্যা এবং গুরুতর আহতের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়ে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঈদুল আজহায় চাঁদাবাজি ও অবৈধ স্থাপনা সংক্রান্ত কারণে ৭২ জনকে গ্রেপ্তার এবং ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৩০ টাকা জব্দ করা হয়।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ভুটান এবং সিঙ্গাপুর ফুটবল দল বাংলাদেশ সফরকালীন গত ৪ এবং ১০ জুন বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি AFC ASIAN CUP ২০২৭ QUALIFIERS ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে বিদেশি খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও অফিসিয়ালদের বিমানবন্দরে থেকে আসা-যাওয়া, হোটেলে অবস্থান, হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে গমনাগমন এবং খেলা চলাকালীন আয়োজক ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। খেলায় বাংলাদেশ ফুটবল দল ভুটানের সঙ্গে জয় লাভ করে এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক খেলা উপহার দেয়। সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ফুটবল দলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছে।

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানে সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৮৩ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ঢাকা সিএমএইচ ১৮ জন এখনো চিকিৎসাধীন।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কুটনৈতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী

এক প্রশ্নের জবাবে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা পায়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী৷ তবে সরকার নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে তারা।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেহেতু সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, সেহেতু সেনাবাহিনী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না, প্রশ্ন করা হলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা প্রাপ্ত হইনি৷ তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করব।

মব ভায়োলেন্স অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে

মব ভায়োলেন্সকে (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে। মব ভায়োলেন্স কি বেড়েছে নাকি কমেছে নাকি নীরবে চলছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স কিংবা জন-দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যেকোনো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে৷ আমরা মব ভায়োলেন্স অনেকাংশে কমিয়ে নিয়ে এসেছি৷ রংপুরের ঘটনাটিতে যে মব ভায়োলেন্স ঘটেছিল সেখানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ার কারণে সেই পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল।’

জাতীয় পতাকা বিক্রির সময় এক ব্যক্তিকে পেটানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচ ছিল। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যতটুকু করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। তবে পরে আমরা ওই পতাকা বিক্রেতাকে ডেকে সমবেদনা প্রকাশ করি। এছাড়া তার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যাতে করে সে তার ব্যবসাটাকে সফলভাবে চালিয়ে যেতে পারে।

সীমান্তে পুশ-ইনের বিষয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক

ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে পুশ-ইনের বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক এবং সজাগ আছে। ‌সীমান্ত এলাকায় তারা টহল বৃদ্ধি করেছে। সেসব জায়গায় স্থায়ী এবং অস্থায়ী ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ওইসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এই বিষয়ে সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো বিষয় এখনো অনুভূত হয়নি, সে কারণে বিষয়টি বিজিবি ও কোস্ট গার্ড দেখছে।

কালের আলো/এমএএএমকে