ঈদুল আজহার সুন্নত

প্রকাশিতঃ 10:07 am | June 06, 2025

ধর্ম ডেস্ক, কালের আলো:

ঈদুল আজহার দিনের প্রধান আমল হলো- কোরবানি করা। কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। শরিয়তে কোরবানির যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে, তার মূলসূত্র ‘মিল্লাতে ইবরাহিমি’তে বিদ্যমান ছিল। কোরআন মজিদ ও হাদিস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কোরবানিকে ‘সুন্নাতে ইবরাহিমি’ নামে অভিহিত করা হয়।

ঈদ মুসলমানদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহোৎসব। মুসলিম মিল্লাতের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে— মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে— একতা, সমদর্শিতা, ভ্রাতৃত্বতা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন। যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের পবিত্রতা ঘোষণা করার পবিত্র উপলক্ষ।

ঈদুল আজহার দিনের সুন্নত আমলগুলো তুলে ধরা হলো এখানে—

১. অন্যদিনের তুলনায় ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকি: ৬১২৬)

২. গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন করা : ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। হাদিস বর্ণিত আছে, ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বুখারি: ১/১৩০)

৩. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার থেকে বিরত থাকা : ঈদুল আজহার দিন পানাহার ছাড়া ঈদগাহে যাওয়া ও নামাজের পর নিজের কোরবানির গোশত দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত। নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে ইদগাহে যেতেন না। আর কুরবানির দিন নামাজের পূর্বে খেতেন না। (তিরমিজি: ৫৪২ ও সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৮১৪)

৪. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা : ঈদের দিন বেশি বেশি তাকবির পাঠ করে আল্লাহকে ডাকার মধ্যেই প্রকৃত আনন্দ। ইদগাহে যাওয়ার সময় ও ঈদের দিন পুরুষরা উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবে। আর মেয়েরা পাঠ করবে নীরবে। পবিত্র কুরআন কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—‘যাতে তোমরা গণনা পূর্ণ কোরো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুণ আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

৫. সুন্দরভাবে জবাই করা : কোরবানির পশু জবাই করার যন্ত্র ভালোভাবে ধার দেওয়া, প্রাণীকে সুন্দরভাবে জবাইয়ের স্থানে নিয়ে যাওয়া ও উত্তমভাবে জবাই করা মুস্তাহাব। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করাকে আবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা কাউকে হত্যা করলে ভালোভাবে কোরো। জবাই করলে উত্তম পন্থায় জবাই কোরো। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধার করে নেয় এবং তার জবাইকৃত পশুকে আরাম দেয়।’ (মুসলিম: ৫১৬৭)

৬. পারলে নিজে জবাই করা : জবাইয়ে পারদর্শী হলে নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করা সুন্নত। অপারগ হলে অন্য মুসলিমকে দায়িত্ব দেওয়া উত্তম। জবাইকারীর মুখ কেবলার দিকে থাকা এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করা মুস্তাহাব। আনাস (রা.) বলেন—“নবী করিম (সা.) ভেড়ার পাশের ওপর পা রেখে আল্লাহর নামে নিজ হাতে জবাই করেছেন। (বুখারি: ৫২৩৮)

বর্ণিত আছে, ‘একশত উটের মধ্যে ষাট বা তার বেশি উট নিজ হাতে জবাই করেন। বাকিগুলো জবাই করতে আলি (রা.)-এর কাছে দেন।’ (মুসলিম: ৩০০৯)

৭. কোরবানির পর নখ, চুল ও লোম কাটা মুস্তাহাব : ঈদুল আজহার দিন কোরবানির জন্তু জবাই করার পর কোরবানি দাতার নখ ও লোম কাটা মুস্তাহাব। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যার জবাইয়ের প্রাণী রয়েছে, সে তা জবাই করবে। অতএব যখন যিলহজের চাঁদ উদিত হয়, তখন সে যেন কোরবানির আগ পর্যন্ত তার চুল ও নখের কোনো কিছু না কাটে। (মুসলিম : ৫২৩৬ ও আবু দাউদ : ২৭৯৩)

কালের আলো/এমডিএইচ