পবিত্র ঈদুল আজহা আজ
প্রকাশিতঃ 2:10 am | June 07, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো
পশুত্বকে পরাভূত করার শিক্ষা নিয়ে আবারও এসেছে কোরবানির ঈদ। আত্মত্যাগ, আত্মসমর্পণ এবং নিজকে উৎসর্গ করার মহিমায় উদ্ভাসিত মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আজ শনিবার (০৭ জুন)। ‘ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এল আবার দুসরা ঈদ! কোরবানী দে, কোরবানী দে, শোন খোদার ফরমান তাগিদ…’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্যসুর আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে মনপ্রাণ উজালা করে তুলছে ঈদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই অনন্য ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তারই নামে জবেহ করা। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে জবাই করা পশুর মাংস বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, কেবল নিয়ত ছাড়া। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা।’
গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণির প্রাণী দ্বারা কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।
আজ শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকেই পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে ঈদগাহে ছুটে যাবেন মুসল্লিরা। সেখানে ঈদুল আজহার ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে আল্লাহ’র সন্তুষ্টির আশায় পশু কুরবানি করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তার পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। এ জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়, ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ অর্থাৎ, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’
এই বছর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়া থাকলে এবং জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য বড় এই জামাতের ভিআইপি ব্লকে একসঙ্গে ২৫০ জনের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও মুসল্লিদের সুবিধায় অজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা ছাড়াও প্রস্তুত থাকবে মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স। অন্যদিকে প্রতিবারের মতো এবার পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান গেট ছাড়াও জাতীয় ঈদগাহে নারী মুসল্লিদের জন্য পৃথক ব্লকে নামাজের ব্যবস্থা ও পৃথক প্রবেশপথ থাকছে।
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে