ব্যাংক খাতে বেড়েছে এফডিআই
প্রকাশিতঃ 5:38 pm | June 01, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
২০২৪ সালে বাংলাদেশে নিট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে দাঁড়িয়েছে ১২৭ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলারে যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৪২৭ কোটি ডলার তবে এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারই মুনাফা বা মূলধন আকারে ফেরত নিয়ে গেছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। ফলে দেশে প্রকৃত বিনিয়োগ হিসেবে থেকে গেছে ১২৭ কোটি ডলার।
বিদেশি বিনিয়োগে এ বছর সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য প্রবাহ দেখা গেছে ব্যাংক খাতে, যেখানে মোট ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে। আগের বছর এই পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৪ লাখ ডলার অর্থাৎ এক বছরে প্রায় ২০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ বেড়েছে এ খাতে। এর পেছনে বড় কারণ ছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসির মতো বহুজাতিক ব্যাংকগুলোর মুনাফা দেশে থেকে যাওয়া। ডলার সংকটের কারণে তারা মুনাফা নিজ দেশে ফেরত নিতে না পারায় সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। উল্লেখ্য, আগের দুই বছরেও একই কারণে ব্যাংক খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ দেখা গেছে।
ব্যাংক খাতের পরে সবচেয়ে বেশি এফডিআই এসেছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে যার পরিমাণ ৪০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এরপর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে ১৩ কোটি ৬০ লাখ, কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭ কোটি ৫ লাখ এবং ট্রেডিং খাতে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। চামড়া, কৃষি ও ট্রেডিং খাতে বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ কমেছে।
বিদ্যুৎ খাতে এফডিআই প্রবাহে সবচেয়ে বড় ধস দেখা গেছে। ২০২৪ সালে এ খাতে মাত্র ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে, যা ২০২৩ সালের ১২ কোটি ২৫ লাখ ডলারের তুলনায় ৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বা প্রায় ৭১ শতাংশ কম। এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। একইভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেলিকমিউনিকেশন খাতেও বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন কারখানা স্থাপন, প্রকল্পে অর্থ লগ্নি এবং শেয়ার ক্রয়। এই অর্থ প্রবেশ করে দেশের অর্থনীতিতে তবে মুনাফা ফেরত নেওয়া বা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কিছু অর্থ দেশ থেকে চলে যায় যা এফডিআই আউটফ্লো নামে পরিচিত। মোট এফডিআই থেকে আউটফ্লো বাদ দিলে যেটুকু থেকে যায় সেটিই নিট এফডিআই হিসেবে ধরা হয়। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ডলার ফলে ২০২৪ সালে তা ১৯ কোটি ডলার কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী দুই প্রান্তিকে দেশে এফডিআই প্রবাহ কমে যায়। বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) নিট এফডিআই ছিল ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার যা এপ্রিল-জুনে কমে দাঁড়ায় ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলারে এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরে আরও নেমে যায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তোলে। তবে শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) নিট এফডিআই কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪৯ কোটি ৪ লাখ ডলারে পৌঁছায়।
ইকুইটি বিনিয়োগ বা মালিকানা ভিত্তিক বিনিয়োগেও গত বছর ভাটা দেখা গেছে। ২০২৪ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ইকুইটি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার যা আগের বছরের ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের চেয়ে প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার কম। শতাংশ হিসেবে এটি ৭ দশমিক ৪২ ভাগ হ্রাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ইকুইটি বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য হ্রাসই এফডিআই প্রবাহে প্রভাব ফেলেছে। শুধু তাই নয় পুনর্বিনিয়োগ ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ (Intercompany loans)-এর মাধ্যমেও বিনিয়োগ কমেছে যা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগে অনাগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।
কালের আলো/এমএএইচএন