ভঙ্গুর অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিপুল অঙ্কের ঋণ
প্রকাশিতঃ 10:14 am | June 01, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী তিন অর্থবছরের জন্য সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই বিপুল অঙ্কের ঋণ মূলত দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে চাকা সচল রাখার উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত ঋণের পরিমাণ প্রায় আসন্ন বাজেটের সমান, যা অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।
এই তিন অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের মধ্যে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, গত সরকারের সময়ে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। এই অবস্থায় সরকার যদি এত বড় অঙ্কের ঋণ নেয়, তাহলে ব্যাংক খাত আরও চাপে পড়বে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী দুই অর্থবছরে এই পরিমাণ বাড়িয়ে যথাক্রমে ২ লাখ ৫১ হাজার কোটি ও ২ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে তিন বছরে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আগের তিন অর্থবছরের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি চেষ্টা করছেন আসন্ন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে রাখার। কারণ, ঘাটতি যত কম হবে, তত কম ঋণ করতে হবে দেশ বা বিদেশ থেকে। তিনি ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাচ্ছেন, যদিও ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। তবে মধ্যমেয়াদি কাঠামোর পরবর্তী দুটি বাজেট ঘোষণার দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের ওপর।
অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে, তবে ব্যাংক খাতের তুলনায় তুলনামূলকভাবে তা কম। আগামী বাজেটে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে যথাক্রমে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি ও ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ২০২৬ সাল থেকে শুরু হবে বড় মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ। সেই সময় প্রতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।
ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়লেও রাজস্ব আয় বাড়ছে না—এটাই মূল সমস্যা বলে মনে করছেন সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ। তার মতে, রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সরকারকে এত বেশি ঋণ নিতে হতো না। তবে তিনি মনে করেন, সরকার আগামী বছর ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, কারণ সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে এতে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলছে।
কালের আলো/এমএএইচএন