কালের আলো রিপোর্ট:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ডিসেম্বরেই হতে হবে নির্বাচন। কিন্তু জাপান সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সব দল নয়, শুধু একটি রাজনৈতিক দলই চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।’ নোবেল লরিয়েট এক্ষেত্রে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির দাবির সঙ্গে আরও ৫২টি দলও একমত। তারাও ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে অনড়।

জানা যায়, ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় এমন দলের সংখ্যা ৩০টি। দলগুলো হচ্ছে-মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আন্দালিব রহমান পার্থর জাতীয় পার্টি (বিজেপি), নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের দল সিপিপি, বজলুর রশীদ ফিরোজের বাসদ এবং ববি হাজ্জাজের এনডিএম। এছাড়া শুক্রবার (৩০ মে) বিবৃতি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট, এলডিপি ও গণফোরাম। সব মিলিয়ে বিএনপিসহ ৫৩টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৬৪টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে ৪২টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত ছিল। দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি এপ্রিল থেকে এক মাসব্যাপী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ধারাবাহিক বৈঠক করে অন্তত ৬০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। ৫২ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মনে করি ডিসেম্বরে ভোট করা যায়। সরকার চাইলে নির্বাচন করতে পারে। আর সেটা যুক্তিসংগতও হবে। আর সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল-তা ৯ মাসের পারফরম্যান্সে নেই।’ তিনি বলেন, এখন সময় দীর্ঘায়িত করলেও বেশি কিছু হবে, এমন মনে হচ্ছে না।

তবে এসব দলের মধ্যে ব্যতিক্রম গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী চায় রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে অথবা রোজার পর এপ্রিলে নির্বাচন। ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল চায় মার্চের মধ্যে এবং এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার শেষে নির্বাচন চায়।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু একটি দল শুধু ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় একথাটি সঠিক নয়। এখন বলাই যায়, নতুন একটি দল তৈরি হওয়ার জন্য তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছেন তারা ছাড়া বাকিরা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়।

১২ দলীয় জোটের নেতারা শুক্রবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরে শুধু একটি দল নয়, দেশের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়। বরং প্রধান উপদেষ্টা নিজেই কিছু মৌলবাদী, জনসমর্থনহীন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনের প্রশ্নটিকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন, করছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এমএ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপির) চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক বিবৃতিতে জানানো হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে একটি দল ছাড়া আর অন্য কোনো দল জাতীয় নির্বাচন চায় না, তা সঠিক নয়। গণফোরাম প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে।

কালের আলো/এমএএইচএন