রেহানা ফেরদৌসীর অনুগল্প: সাঁঝের আলোয় রং বদলের ভালোবাসা

প্রকাশিতঃ 3:54 pm | May 31, 2025

সাহিত্য ডেস্ক, কালের আলো:

সন্ধ্যার আলোটা সেদিন যেন একটু বেশিই মায়াবী ছিল। বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ হলো। আকাশজুড়ে সাদা-ধূসর মেঘের আনাগোনা। রাস্তার ধারে পুরোনো সেই চায়ের দোকানে এক কোণে বসে গুটি কয়েক জনের হাতে ধোঁয়া ওঠা এককাপ চা। চলছে আড্ডা। আমার ছোট্ট অলিন্দে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, সাঁঝের আলোয় রং বদলের খেলা আর অবচেতন মন ভাবছিলো পুরোনো অনেক কথা।

কিছুদিন আগে জানতে পারলাম, তুমি নাকি আবারও নতুন জীবন শুরু করেছো! আবারও কি তবে কারো মায়াবী চোখে চোখ পড়েছে? তার হৃদয় হরণকারী অপলক চাহনিতে তোমার মন কেড়েছে। তার চোখের ভাষায় তোমার প্রতি তার আবেদন—তুমি পড়ে নিয়েছিলে! দূর থেকেও তার সাথে চোখের ভাষায় কথা বলেছিলে! জনসম্মুখে লজ্জায় তার সাথে কথা বলতে না পেরে চোখ দেখে বুঝে নিয়েছিলে, তার কী চাই!

আচ্ছা, সে-ও কি তোমার চোখের ভাষা বোঝে? দৃষ্টির অগোচর হলে পাগলের মতো খোঁজে? তোমার চোখের মায়ায় সে-ও কি নিজেকে হারিয়ে ফেলে! তুমি তাকে চাও, এখনি চাও—এ অভিব্যক্তির প্রতুত্তর সে কি চোখের ভাষায় দিতে পারে! তোমার আদর নেওয়ার জন্য কি বায়না করে সাঁঝের বেলা কিংবা অবেলায়? ঘর সাজিয়ে, ফুলের গন্ধ গাঁয়ে মেখে—অপেক্ষায় থাকে তোমার প্রতীক্ষায়!

সেও কি পায়ে আলতা পরে? নূপুরের ঝংকারে তোমার হৃদয়কে করে আন্দোলিত। নাকি কাঁচের চুড়ি পরে? মোটা দাগে কাজল টেনে আরও আবেদনময়ী করে তোলে চোখগুলোকে! তার লেপ্টে যাওয়া ঠোঁটের লিপস্টিক কি তুমি আলতো পরশে তোলো? ভেজা চুলের পানির ফোঁটা তোমার গালে এসে ছিটকে পড়লে নিশ্চয়ই এখন আর বিরক্ত হও না!

খাবার টেবিলে বসে হয়তো তার প্লেটটা সাজিয়ে দাও সযতনে। নতুবা খাওয়ার মাঝে তোমার প্লেট থেকেই লোকমা তুলে দাও! ভোরবেলায় তার শরীরে চাদরটা ঠিক করে দাও তো! তার শাড়ি পরার সময় ব্লাউজের বোতাম লাগিয়ে দিয়ো। নয়তো শাড়ির কুচি ঠিক করে দিয়ো!

আমার না পাওয়া—তোমার ভালোবাসাগুলো তাকে দিও, যেন কোথাও না হারায়। তার প্রতি তোমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস পেয়ে যেন ভাবে, কোনো এক পুণ্যের বিনিময়ে পেয়েছে তোমায়! দূর থেকে তোমাদের ভালোবাসার গল্প শুনে আমি যেন নিজেকে বলতে পারি—‘ভাগ্যিস! ভালোবাসা শিখিয়েছিলাম তোমায়!’

কালের আলো/এমএএইচএন