উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি ঢাবি ছাত্রদলের

প্রকাশিতঃ 3:26 pm | May 31, 2025

ঢাবি প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ও নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মানে এ প্রশাসন ব্যর্থ অভিযোগ করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শনিবার (৩১ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত ‘ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং সাম্প্রতিক রাজনীতি’ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি ছাত্রদল এ দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ক্রাইম সিনের জায়গাটি ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত রাখা, রমনা কালী মন্দির, বাংলা একাডেমি ও তার আশেপাশের কোন সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার মতন অস্বাভাবিক বিষয়াবলি ঘটনাটিকে আরো সন্দেহজনক করে তোলে।

তিনি দাবি করেন, যে সময় ছুরিকাঘাত করা হয় সে সময় ঘটনাস্থলে কতিপয় পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু শহিদ সাম্যকে ছুরিকাঘাতের পরে ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া বিক্ষুব্ধ জনতা খুনিদেরকে আটকে রেখে উক্ত পুলিশ সদস্যদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে তারা তা না করে বরং খুনিদেরকে ছেড়ে দিতে উৎসাহিত করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কেন বা কাদের অনুরোধে আসামিদের ছেড়ে দিয়েছিলো তার কোনো সদুত্তর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।’

ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, সাম্য হত্যার প্রায় ১৩ দিন পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয় তাও ছিলো ‘অত্যন্ত অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর’।

তিনি আরও বলেন, সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী শহিদ সাম্যকে হত্যা করা হয় হত্যাকারীদের হাতে থাকা একটি ছোট্ট ট্রেজার গানকে কেন্দ্র করে। অথচ কর্তব্যরত ডাক্তারের ভাষ্যমতে শহিদ সাম্যের উরুতে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুভাবে তার ‘ফিমোরাল আর্টারি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে দেওয়া হয়, যার ফলে মাত্র দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হন তিনি।

তিনি দাবি করেন, পরিচয় দেওয়ার পরেও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সুপরিচিত ছাত্রদল নেতাকে এমন একটি তুচ্ছ বিষয়ে আক্রমণ করে অতি পেশাদার উপায়ে হত্যা করার পেছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে নাকি নেই- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোন তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন ডিএমপি কর্তৃপক্ষ।

ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নানান উপায়ে লুকিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অনীহা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তাই শহিদ সাম্যর মতন একনিষ্ঠ সহযোদ্ধাকে হারানোর পরে বিদারিত হৃদয় নিয়ে আজ আমাদের লক্ষ্য করতে হচ্ছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি আবাসিক হলসমূহেও নানান উপায়ে ছলে-বলে-কৌশলে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে, চিহ্নিত করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।

হাজারো প্রাণের বিনিময়ে যে ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদী শক্তির জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সমূহে, দেয়ালে বিরাটাকারে লেখা হচ্ছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের দলীয় স্লোগান এমনও মন্তব্য করেন সাহস।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং ন্যাক্কারজনক নানান ঘটনা ঘটে যাবার পরেও তাদের গা-ছাড়া মনোভাবের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাবিধানে তাদের অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

‘নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে এই প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো, সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার ব্যর্থতা এই প্রশাসন কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে এই শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তার বিষয়ে দায়িত্বশীল উপাচার্য এবং প্রক্টর অবিলম্বে পদত্যাগ করে যোগ্যতর ব্যক্তিদেরকে এই গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেয়ার এবং নতুন প্রশাসনের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলার যৌক্তিক দাবি আবারও আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

কালের আলো/এএএন