সুদানে কলেরার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে ১৭২ জনের প্রাণহানি
প্রকাশিতঃ 8:05 pm | May 27, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সুদানে প্রাণঘাতী কলেরার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দেশটিতে মাত্র এক সপ্তাহে অন্তত ২ হাজার ৭০০ জন কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে এই রোগে মারা গেছেন কমপক্ষে ১৭২ জন। মঙ্গলবার সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দেশটিতে কলেরায় আক্রান্ত ও প্রাণহানির এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দেশে কলেরায় আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই রাজধানী খার্তুমের বাসিন্দা। সম্প্রতি খার্তুমে একাধিক ড্রোন হামলার কারণে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আর এই হামলার ঘটনায় দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দায়ী বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয় দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই চালিয়ে আসছে আরএসএফ।
দেশটির দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলেও কলেরা আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। অতীতে আফ্রিকার এই দেশটিতে কলেরা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশটির সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে এই মহামারির অবসান ঘটলেও সম্প্রতি আবারও প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে।
সুদানের দুই বাহিনীর মাঝে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই প্রাদুর্ভাব আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুদ্ধের কারণে দেশটিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, গত তিন সপ্তাহে দেশজুড়ে ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৫১ জন; যাদের ৯০ শতাংশই খার্তুম রাজ্যের বাসিন্দা।
চলতি মাসে রাজধানী খার্তুমের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন হামলা চালায় আরএসএফ। তবে সেনাবাহিনীর হামলার মুখে গত সপ্তাহে রাজধানীর শেষ ঘাঁটিগুলো থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় দেশটির এই আধা-সামরিক বাহিনী।
আরএসএফের হামলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট তৈরি এবং স্থানীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, দুই বাহিনীর লড়াইয়ের কারণে লোকজন অনিরাপদ পানির উৎস ব্যবহারে বাধ্য হয়েছে।
এমএসএফের খার্তুমের মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর সোলায়মান আম্মার বলেন, ‘‘পানি পরিশোধন কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যে কারণে তারা নীল নদের পানি পরিশোধন ও সরবরাহ করতে পারছেন না।
তীব্র ডায়রিয়া-জনিত রোগ কলেরা। যা সাধারণত দূষিত পানি বা খাবারে মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিকে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সময়মতো চিকিৎসা পেলে সহজেই প্রতিরোধ ও নিরাময় করা যায় এই রোগের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যুদ্ধের কারণে সুদানের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে একেবারে ‘‘ভেঙে পড়ার’’ দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সুদানের চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস ইউনিয়ন বলছে, যুদ্ধের কারণে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি হাসপাতাল কোনো না কোনো সময় রোগীদের সেবাদান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া প্রায়ই দেশটির হাসপাতালগুলোতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে।
তৃতীয় বছরে গড়ানো এই যুদ্ধে আফ্রিকার দেশটিতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। একই সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ।
সূত্র: এএফপি।
কালের আলো/এসএকে