আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে সরকারকে ৩ ইসলামি দলের সাধুবাদ
প্রকাশিতঃ 1:13 pm | May 12, 2025

নিউজ ডেস্ক, কালের আলো:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ৩টি ইসলামিক দল। দলগুলো হলো খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
রোববার (১১ মে) ৩টি আলাদা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারকে সাধুবাদ ও স্বাগত জানায় দলগুলো।
খেলাফত মজলিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।
এক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ এর পূর্বে বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে সংঘটিত বিভিন্ন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে এই দলটি ভারতের সহযোগিতা নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সহিংস অবস্থান গ্রহণ করেছিল। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতা-কর্মী মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সরাসরি জড়িত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, খেলাফত মজলিস গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই হত্যাকারীদের বিচারের স্বার্থে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। অবশেষে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনে খেলাফত মজলিসসহ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও তাওহীদি জনতা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। আমরা অবিলম্বে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিবন্ধন বাতিল এবং বিচার কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলে, বিচারিক কাজ গতিশীল করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এতে বলা হয়, আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে মাত্রায় অপরাধ করেছে তাতে অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের প্রথম কার্যদিবসেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ ছিল। সরকার তা করে নাই। আমরা বারংবার বিভিন্নভাবে এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে জনতাকে বৈশাখের প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে লাগাতার আন্দোলন করতে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ করতে হয়েছে। তথাপিও গতকাল উপদেষ্টা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা সাধু্বাদ জানাই।
আমীর বলেন, মানুষের প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এতে জনতার প্রত্যাশার একাংশ পূরণ হয়েছে। আমরা চাই অতি দ্রুততার সাথে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার শেষ করে রায় বাস্তবায়ন করা হবে এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে। বিগত নয় মাসের মতো এই ক্ষেত্রে টালবাহানা করলে জনতা সরকারের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, ইসলাম ইনসাফে বিশ্বাস করে। তাই যে কাউকে শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়াকে আমরা সর্বদাই গুরুত্বারোপ করি। আওয়ামী লীগ যতবড় স্বৈরাচারই হোক বা তার পাপের বোঝা যত বড়ই হোক, আমরা চাই আওয়ামী লীগের শাস্তি বিচারিক প্রক্রিয়াতেই হোক। তবে বিচারিক প্রক্রিয়ার কথা বলে দিনের পর দিন অপরাধীরা ঘুরে বেড়াবে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে তা সহ্য করা হবে না। তাই দ্রুততার সাথে আওয়ামী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিপ্লবী জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বৈশাখের প্রচণ্ড খরতাপের মধ্যে আপনারা যেভাবে রাজপথে অবস্থান করেছেন, তা জাতিকে আবারো উজ্জীবিত করেছে। অধিকার আদায়ে আমাদের এই বিপ্লবী মানসিকতা যতদিন অটুট থাকবে ততদিন কেউ এই জাতিকে পদানত করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে সময়োচিত, বাস্তবধর্মী এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছি। এই সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার অতীতের অবিচার ও নিপীড়নের বিচারিক পথ সুগম করল।
তারা বলেন, বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের ওপর যে সীমাহীন নির্যাতন, হত্যা, গুম, গ্রেফতারও দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তা ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস, বিরোধী মত দমন এবং ইসলামপন্থীদের ওপর অমানবিক হামলা, নির্যাতন-নিপিড়নসহ ইত্যাকার অপরাধের বিচারকাজ নির্বিঘ্ন ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে হলে এই নিষেধাজ্ঞা অপরিহার্য ছিল।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনে করে, জাতিকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে হলে অতীতের সব অপরাধের বিচার হওয়া আবশ্যক। আর এই বিচারের পথে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি বড় অগ্রগতি। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা, তার লেসপেন্সারদের এবং দল আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করুন। শাস্তি কার্যকর করুন।
তারা আরও বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে রাজপথে থেকে যাঁরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আন্দোলনরত সেই ছাত্র-জনতা, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অভিনন্দন জানায়।
আশা করছি, সকল দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং জাতীয় জীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার ফিরে আসবে।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কালের আলো/এমডিএইচ