নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে জনগণ ক্ষমা করবে না : আমীর খসরু

প্রকাশিতঃ 9:17 pm | May 01, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে ছিল না, এখন তারাই বলছে নির্বাচন না হলেই ভালো। তারা এক ধরনের সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু জনগণ তাদের এ সুযোগ বেশি দিন দেবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন ছাড়া কাউকে ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা দেবে না। যারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তাদের প্রতি দেশের মানুষের বার্তা স্পষ্ট-তাদের জনগণ ক্ষমা করবে না এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কোনো ইচ্ছাও পূরণ হবে না।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মে দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের শ্রমিক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণমূলক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে যেভাবে শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। দেশে এখন নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, পারিশ্রমিক ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। মালিক ও প্রশাসনের একচেটিয়া অবস্থানে শ্রমিকরা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তাই সবাইকে এগিয়ে এসে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে সহায়তা করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লড়াইয়ে বিএনপি তাদের পাশে আছে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, যদি দেশে একটি নির্বাচিত সরকার থাকত, তাহলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যুতে সংসদে আলোচনা হতো এবং জনগণের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হতো। অথচ এখন এমন সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছে, কারা বসে নিচ্ছে-তা জাতি জানে না।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতিতেই কেবল এই করিডোর সম্ভব, তাও নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের শর্তে। তাহলে এখন যারা বাইরে বসে এসব সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, তারা কীভাবে এত সাহস পাচ্ছেন?

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায় এবং দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শ্রমিকদের অবদান ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনীতি-কোনোটিই সম্ভব নয়। যারা এ দেশের শিল্প-কারখানা, অবকাঠামো, পরিবহন খাতকে সচল রাখেন, তাদের বাদ দিয়ে দেশের কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়।

আমরা গত ১৬ বছর ধরে লড়াই করছি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। গণতন্ত্রের বাহনই হলো নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া জনগণের ক্ষমতায়ন ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন সম্ভব নয়। নির্বাচন ছাড়া জনগণের মালিকানা ফেরানো সম্ভব নয়।

আমীর খসরু বলেন, যারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, তারা নিজেরাই অনির্বাচিত সরকারের সুবিধাভোগী। তারা এখন নানা শর্ত দিচ্ছে—এই না হলে নির্বাচন হবে না, ওই না হলে নির্বাচন হবে না। এসব বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। কারণ, তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচনে গেলে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান মুখ থুবড়ে পড়বে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া।

কালের আলো/এসএকে