মাংসের বস্তা ফেলে হরিণশিকারিদের চম্পট

প্রকাশিতঃ 5:55 pm | October 01, 2024

খুলনা প্রতিনিধি, কালের আলো:

ভোরের আলো ফোটার আগেই গহিন বন থেকে অবৈধভাবে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে এসেছে শিকারির দল। নির্জন রাস্তার ওপর মাংস ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। ভাগ করা মাংস সবে বস্তায় ভরছেন—এমন সময় আকস্মিকভাবে হাজির হন সুন্দরবনের বজবজা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা। তাদের দেখেই মাংসের বস্তা ফেলে পালিয়ে যায় হরিণশিকারিরা।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোরে সুন্দরবন-সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার জোড়শিং এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর এ ঘটনা ঘটে।

বজবজা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পান, সুন্দরবন থেকে চোরা শিকারিরা হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে লোকালয়ে ফিরেছে। জোড়শিং এলাকার বেড়িবাঁধের ওপর থেকে হরিণের মাংস ভাগাভাগি করছে। এরপর কয়েকজন বনরক্ষীকে নিয়ে তিনি সেখানে অভিযান চালান।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা পৌঁছে আবছা আলোয় দেখতে পাই, কয়েকজন রাস্তার ওপর একটি সাদা বস্তায় কী যেন রাখছেন। কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই আমাদের দেখে বস্তা ফেলে তারা পালিয়ে যান। তাঁদের পিছু নিলে শিকারিরা গ্রামের মধ্যে ঢুকে যায়। এ জন্য তাঁদের ধরতে পারিনি। বস্তার মধ্যেই ৩টি পলিথিনের ব্যাগে ১৫ কেজি হরিণের মাংস পেয়েছি। পালিয়ে যাওয়া শিকারিরা জোড়শিং এলাকার বাসিন্দা বলে ধারণা করছি।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন লাগোয়া কয়রা উপজেলায় ৩২টি পেশাদার হরিণশিকারি দল আছে। কয়রার আংটিহারা, জোড়শিং ও মহেশ্বরীপুর এলাকায় হরিণশিকারি চক্রের আধিপত্য বেশি। গত ২২ ও ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি অভিযানে সাড়ে ১২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে।

সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, লোকালয়ের পাশে ছোট একটি নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। পেশাদার শিকারিরা গোপনে বনে ঢুকে হরিণের যাতায়াতের পথে নাইলনের দড়ির একধরনের ফাঁদ পেতে রাখেন। চলাচলের সময় হরিণ সেই ফাঁদে আটকে যায়। তারপর বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়।

হরিণ শিকারের জন্য কারাগারে যাওয়া কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার এক শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বনের যেদিকে কেওড়াগাছ বেশি সেখানে হরিণের বিচরণ বেশি। সেসব এলাকায় ডোয়া (ফাঁদ) পেতে হরিণ ধরা হয়। সারা বছরই জঙ্গলে ডোয়া পেতে রাখা হয়। প্রতিদিন বা একদিন পরপর চেক করে আটকা পড়া মাল খুলে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, ফাঁদে বন্য শূকর আটকা পড়লেও হরিণের মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি হয়। এলাকায় মাংস বিক্রি ঝুঁকিপূর্ণ হলে মাছের গাড়িতে খুলনাসহ বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি মোবাইলে ফরমাশ নিয়ে ঢাকায়ও পাঠানো হয়।

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের বন্য প্রাণী নিধনে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্যদাতাকে পুরস্কার দেওয়ার বিধিমালা অনুমোদনের ফলে এলাকাবাসীর থেকে এখন চোরা শিকারিদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমে এসেছে। আজও হরিণের মাংস জব্দের ঘটনায় দুপুরে কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন্য প্রাণী নিধন আইনে মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। হরিণ নিধনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ