যেভাবে পরিচালিত হল অভিযান
প্রকাশিতঃ 11:13 pm | February 24, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ বিজি-১৪৭ চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর ক্যাপ্টেন ও বেশিরভাগ যাত্রী নিরাপদে নেমে যেতে পারলেও একাধিক কেবিন ক্রু বিমানটির ভেতরে জিম্মি ছিল। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ৮ মিনিটের সফল যৌথ অভিযানে ছিনতাইকারী নিহত হয়।
রোববার(২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে এটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।
২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেছেন, বিএনএস ঈশাখানে আগে থেকেই অন্য একটি কাজে প্যারা-কমান্ডোরা মোতায়েন ছিল। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টায় জানানোর পর তারা দ্রুততম সময়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয় এবং অত্যন্ত সফল একটা অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে এই ছিনতাইচেষ্টার অবসান ঘটায়।’
চট্টগ্রামে বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ২৬ বছর। ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার জন্য আমাদের কমান্ডোরা প্রথমে তাকে সারেন্ডার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে তার ওপর স্বাভাবিক অ্যাকশন যেটা, সেটা নেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত ও পরবর্তীতে সে মারা গেছে।’
এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘এই ঘটনায় কোনও যাত্রী হতাহত হয়নি। বিমানের মধ্যে ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ ক্রুসহ মোট ১৪৮ জন যাত্রী এবং ক্রু মেম্বার ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেই অক্ষত অবস্থায় বিমান থেকে বের হয়ে এসেছেন। এই বিমান কোনও ক্ষতি হয়নি। বিমানটি তল্লাশি করে ইতোমধ্যে বিমানটিকে চলাচল করার জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার (ছিনতাইকারী) সঙ্গে যে কথোপকথন হয়েছে সে শুধু একটি দাবিই করেছিল; সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। এরপর তার সঙ্গে আমাদের কথা বলার আর কোনও সুযোগ ছিল না, যেহেতু দ্রুততম সময়ে এ ছিনতাই ঘটনার অবসান করতে চেয়েছিলাম।’
২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমি বলছি যে, আমাদের কমান্ডো অভিযান হয়েছে। এই কমান্ডো সেই কমান্ডো সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল, যে হলি আর্টিজানে অপারেশন করেছিল। আমরা তাদের সৌভাগ্যবশত এখানে পেয়েছিলাম। তারা অত্যন্ত সফল একটি অভিযানের মধ্য দিয়ে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে এই ছিনতাইয়ের অবসান ঘটানো হয়েছে। তাকে দেখে প্রথমে আমাদের পাইলট মনে করেছিল, সে একজন বিদেশি। কিন্তু সে একজন বাংলাদেশি। তার কাছে একটি অস্ত্র ছিল। একটা পিস্তল। এছাড়া অন্য কিছু এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। সে যাত্রীদের কোনও ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনও বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ছিনতাইকারীর সঙ্গে কথোপকোথন করা। সেটার মধ্য দিয়ে ছিনতাইকারীকে ব্যস্ত রাখা। এ কাজটি আমাদের বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিজ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করেছিলেন। যা আমাদের কমান্ডো অভিযান ভালো একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলেন। এখানে প্যারাকমান্ডোর সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, নৌবাহিনীর একটি দল ও র্যাব ৭-এর সিও এবং তার দলবল।’
এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটলে বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়, বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশি-বিদেশি মানুষ আটকা পড়ে যায়। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত বিমানবন্দরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া। এ ধরনের ঘটনায় দুটো কাজ যুগপৎ চলতে থাকে। একটা হচ্ছে তার সঙ্গে কথা বলা। একইসঙ্গে অপারেশনাল প্ল্যান করা। যখন আমাদের অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে, তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছে তখনতো আর কথাবার্তা হয়নি। সে নিজেকে মাহাদি বলে দাবি করেছে। এখন তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হবে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিমানের মধ্যেই আহত হয়। পরে বাইরে মারা যায়।’
কালের আলো/এমএইচএ