ঈদ জামাত শেষে চলছে পশু কোরবানি

প্রকাশিতঃ 10:11 am | June 17, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সামর্থ্যবান মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ শেষে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। সোমবার (১৭ জুন) ঈদের নামাজ শেষে রাজধানীসহ সারা দেশে পশু কোরবানি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পশু কোরবানি করা যাবে ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত।

প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া, দুম্বা কোরবানি চলছে। বাবা-ছেলে, পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা সবাই মিলে কোরবানিতে অংশ। কসাইরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস প্রস্তুত করে দিচ্ছেন তারা।

কোরবানির পশু জবায়ের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থান থাকলেও রাজধানীবাসী বাসার গ্যারেজে, মহল্লার রাস্তা, ফাঁকা মাঠ এমনকি প্রধান সড়কে পশু কোরবানি দিয়েছেন।

রাজধানীর তেজগাঁওসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাঁকা জায়গা না থাকায় অধিকাংশ মুসল্লি পাড়া-মহল্লার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বেশিরভাগ মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিমের (আ.) দেখানো পথে ত্যাগের মহিমা ও উৎসর্গের আনন্দ নিয়ে সোমবার সকালে খালি পেটে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ তাকবির ধ্বনি দিতে দিতে ঈদ জামাতে হাজির হন মুসল্লিরা।

পরে ঈদের জামাত শেষে দ্রুত ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার…’ জিকিরে পশু কোরবানি দেওয়া শুরু করেন। কেউ নিজের গরু নিজেই কোরবানি করছেন। আবার কেউ কেউ মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেনদের দিয়ে পশু জবাই করাচ্ছেন।

তেজগাঁও পশ্চিম নাখাল পাড়া বায়তুল আতিক জামে সমজিদে ঈদের নামাজ শেষে নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করেন রিয়াজ মাহমুদ সৌরভ। তিনি বলেন, ঈদু আজহার আনন্দ হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনায় আর ঈদের নামাজ পড়ে পশু কোরবানি দেওয়া।

তেজকুনী পাড়ার বাসিন্দা মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সকালে নামাজ পড়ে এসেই পশু কোরবানি করেছি। আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন।

রাজাবাজার এলাকার সুমন হোসেন বলেন, আমরা ভাই-বোন সবাই এক সঙ্গে কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির কাজে সহযোগিতা করছি। এটা আমাদের কাছে খুবই আনন্দের। মাংস কাটা শেষ হলে আত্মীয়দের বাসায় পাঠাব এবং গরিব-অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করবো। ঈদ মানে সবার জন্য আনন্দ।

এদিকে কোরবানির পশুর রক্ত ও বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার করার এবং নির্ধারিত স্থানে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি মেয়র। এ ছাড়া কোরবানির বর্জ্য অপসারণ বা কোরবানির গোশত বিতরণে পরিবেশসম্মত ব্যাগ বা পাত্র ব্যবহারে স্থানীয় ওয়ার্ড প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

কসাইদের ব্যস্ততম দিন

এক যোগে সাড়া দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপন ও এক সঙ্গে অনেক পশু জবাই হওয়ায় পেশাদার কসাই ছাড়াও মৌসুমি কসাইদের কদর দেখা যায় রাজধানীজুড়ে। লাখ লাখ পশু কোরবানি হওয়ায় রাজধানীমুখী বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মৌসুমি কসাই ঢাকায় আসেন।

গ্রাম থেকে আসা কয়েকজন মৌসুমি কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তারা জানান, প্রতি কোরবানির ঈদে তাদের চাহিদা বাড়ে। কিছু টাকা আয়ের পাশাপাশি কোরবানির গোস্ত পাওয়া যায়। তবে এসব কসাইরা তুলনামূলক কম টাকা পান বলে অভিযোগ অনেকের।

যেভাবে শুরু হয়েছে কোরবানির মহিমা

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে মহান আল্লাহর আদেশে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।

তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন, তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর তরফ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব বা কারও কারও মতে সুন্নত।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত হিসেবে কোরবানির মাংস তিন ভাগের এক ভাগ গরিবের হক ও এক ভাগ আত্মীয়ের হক হিসেবে বণ্টন করা হয়। বাকি এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা হয়। এ নিয়মটি উত্তম হলেও কোরবানি যিনি দিচ্ছেন, তিনি চাইলে পুরো বা আংশিক মাংস নিজেদের জন্য রাখতে পারেন বা বিলিয়েও দিতে পারেন।

জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনও দিন পশু কোরবানি করা যায়। তবে মহানবী (সা.) ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিন কোরবানি করাকেই উত্তম ঘোষণা করেছেন। সেই মোতাবেক এবার সোমবার (১৭ জুন) ১০ জিলহজই বেশিরভাগ মানুষ পশু কোরবানি করছেন।

কালের আলো/এমএইচইউআর